বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিলেন খাশোগির ছেলেরা

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগি
সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগির ছেলেরা তাদের বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় খাশোগির ছেলেদের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট খাশোগির ছেলেদের ওই টুইটে বলা হয়, 'আমরা শহীদ জামাল খাশোগির ছেলেরা ঘোষণা দিচ্ছি, যারা আমাদের বাবাকে হত্যা করেছে, আমরা তাদের ক্ষমা করে দিলাম।' সংবাদসূত্র : এএফপি, বিবিসি মধ্যপ্রাচ্যের কট্টরপন্থি দেশ সৌদির রাজপরিবারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত খাশোগি গত বছরের ২ অক্টোবর দুপুরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসু্যলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, ওই কনসু্যলেটের ভেতরেই জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। সৌদির একটি 'কিলিং স্কোয়াড' যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ওই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু প্রথম থেকেই ওই হত্যাকান্ডের কথা অস্বীকার করে আসছে সৌদি। যেদিন জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছিল, সেদিন ভোরেই সৌদি থেকে একটি প্রাইভেট জেট বিমান নামে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে। তুরস্কের টেলিভিশনে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিমান থেকে ৯ ব্যক্তি নেমে আসে। পরে আরেকটি বিমানে করে আসে আরও ছয়জন। তারা ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসু্যলেটের কাছে দুটি হোটেলে ওঠে। সন্দেহভাজন ওই ১৫ জনকে সৌদি এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাদের নাম এবং ছবিও প্রকাশ করা হয়। খাশোগি হত্যায় সন্দেহের তীর তাদের দিকেই ছিল। সাংবাদিক খাশোগি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসু্যলেটে গিয়েছিলেন তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে তালাক সম্পর্কিত কাগজপত্র নিতে। এরপরই তিনি তার তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তিনি সৌদি কনসু্যলেটে প্রবেশের আগমুহূর্তে সেখানে তার বান্ধবীর কাছে দুটি মোবাইল ফোন রেখে গিয়েছিলেন। তার বান্ধবী সৌদি কনসু্যলেটের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু খাশোগি সৌদি কনসু্যলেট থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। পরবর্তী সময়ে জামাল খাশোগির মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত তার মরদেহের কোনো হদিস মেলেনি। এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৮ জন দোষী সাব্যস্ত হন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতু্যদন্ডের আদেশ দেওয়া হয় এবং এছাড়া তিনজনকে ২৪ বছর কারাদন্ড দেয় দেশটির একটি আদালত। বাকিরা এই মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে খাশোগির ছেলে সালাহ বলেছিলেন, বিচারব্যবস্থার ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অপরদিকে, গত এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সালাহসহ খাশোগির অন্য সন্তানরা সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সালাহ। খাশোগি হত্যামামলা নিষ্পত্তিতে সৌদি সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' (সিআইএ) এবং জাতিসংঘের একটি বিশেষ দূতের পক্ষ থেকে খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদির 'ডি-ফ্যাক্টো' শাসক 'ক্রাউন প্রিন্স' মোহাম্মদ বিন সালমানের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। তবে সৌদির পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।