আম্পানের তান্ডব

পশ্চিমবঙ্গে মৃতু্য বেড়ে ৮০ ক্ষয়ক্ষতি দেখলেন মোদি

কলকাতায় ১৯ ও অন্যত্র ৬১ জনের মৃতু্য এক হাজার কোটি রুপি সহায়তা ঘোষণা মোদির

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ হয়েছে বলে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি মেরামতে প্রাথমিকভাবে তিনি রাজ্যের তহবিল থেকে এক হাজার কোটি রুপি বরাদ্দও দিয়েছেন। এদিকে, শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হেলিকপ্টারে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার সঙ্গে মমতা এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও ছিলেন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ এদিন মোদি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ওড়িশার বিভিন্ন এলাকাও পরিদর্শন করেন। আম্পানের ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে মোদি ৮৩ দিন পর রাজধানী দিলিস্ন ছেড়ে বাইরে এলেন। এর আগে সর্বশেষ ফেব্রম্নয়ারিতে তিনি উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলেন। বুধবার পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানা আম্পানে রাজ্যটির বেশ কয়েকটি জেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্গম অনেক স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এখনো উঠে আসেনি বলে অনেকে মনে করছেন। সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি ছাড়াতে পারে বলে মমতা আশঙ্কা করছেন। ঝড়ে কলকাতায় ১৯ জন ও রাজ্যের অন্যত্র আরও ৬১ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন তিনি। মৃতদের পরিবারকে আড়াই লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় দেওয়া অর্থ হিসাব করে খরচ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, '১৭৩৭ সালে সর্বশেষ এমন দুর্যোগ হয়েছিল। সতর্কবার্তা পেয়ে পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে লাখো প্রাণ বেঁচেছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা আইলার চেয়েও বেশি ছিল। এই দুর্যোগ করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ।' ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কিছু দেয়নি বলেও বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, 'আর্থিক অবস্থা খারাপ। কেন্দ্রের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। আয় কিছুই নেই। পুরো খরচ ঘর থেকে করতে হচ্ছে। কীভাবে চলবে জানি না।' আম্পান আঘাত হানার আগে লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার সময় সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল বলে কর্মকর্তারা বলছেন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও রাজি ছিল না। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির কারণে সামনের দিনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। রাজ্যটিতে শুক্রবার পর্যন্ত কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত তিন হাজার ২০০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৯ জনে। এক হাজার কোটি রুপি সহায়তা ঘোষণা মোদির এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবের পর শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ পরিদর্শনে গিয়ে স্বচক্ষে ভয়াবহতা দেখার পর এক হাজার কোটি রুপির আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবঙ্গ সফরে হেলিকপ্টারে করে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন মোদি। তিনি জানিয়েছেন, এই দুর্যোগে পশ্চিমবঙ্গের পাশে আছে কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট জেলা পরিদর্শনের সময় মোদি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গকে এক হাজার কোটি রুপি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এই অর্থ পুনর্বাসন এবং পুনর্র্নির্মাণের পেছনে ব্যয় হবে।' তিনি বলেন, 'আমরা সবাই চাই, পশ্চিমবঙ্গ এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াক। এই কঠিন পরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় পশ্চিমবঙ্গের পাশে থাকবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করে পশ্চিমবঙ্গের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সহায়তা করব।'