মিয়ানমারে সংঘাত
মুহুর্মুহু শেলের বিস্ফোরণ কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত
টহল বাড়িয়েছে বিজিবি
প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত কয়েকদিনে তেমন একটা গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও রোববার রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এপারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম। এরপর সোমবার ভোররাত থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত ফের মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে নাফ নদীর এপারে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তের গ্রামবাসীর মধ্যে। স্থানীয়রা জানান, রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কিছুটা উত্তরে নাকপুরা এলাকায় রোববার রাতে এবং সোমবার সকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে। তবে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এবং অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
জানা যায়, রাখাইনের নাকপুরা এলাকার এপাশে (নাফ নদীর এপারে) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপলস্নী চৌধুরীপাড়া ও ফুলের ডেইল গ্রাম। রাতে ২১টি মর্টার শেলের বিকট শব্দে এপারের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, 'দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এতদিন রাত ও দিনে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলেছে। উভয় পক্ষ থেকে গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে মংডু টাউনশিপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।'
তিনি আরও বলেন, 'গত ছয় দিন মংডুর আশপাশের গ্রামগুলোতে দিনে গোলাগুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতে কয়েকটি গ্রাম থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যেত। কিন্তু রোববার রাতে হঠাৎ একসঙ্গে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ এপারের লোকজনকে ভাবিয়ে তুলেছে।'
এর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান বিদ্রোহীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষে কয়েকবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে অবিস্ফোরিত মর্টার শেল পড়েছে। গুলি এবং মর্টার শেল বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রম্ন ও টেকনাফের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের অনেক বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে দূরের আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সীমান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। গোলাগুলির শব্দ কমে আসায় তারা ঘরে ফেরেন। তবে ফের গোলাগুলির শব্দে সীমান্তের লোকজনের মনে আবারও অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। সীমান্তের এপারের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রোববার সন্ধ্যায় আরাকান আর্মি স্থলপথে নাকপুরা এলাকার বিজিপি সেক্টর ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়। এরপর বিজিপি সদস্যরাও পাল্টা জবাব দেয়। তখন রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে টানা ৩৩ মিনিট মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির অবস্থানের ওপর মর্টার শেলগুলো নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জেটির টোল আদায়কারী মোহাম্মদ ছিদ্দিক বলেন, 'সেহরির সময় থেকে মিয়ানমারের দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। সকালে ভারী মর্টারশেলের শব্দ আসে। এখানকার জেলেসহ অন্যরা আতঙ্কের মধ্যে আছে।'
শাহপরীর দ্বীপের জেলেপাড়ার সভাপতি আবদুল গণি বলেন, 'চার-পাঁচ দিন ধরে তেমন গোলাগুলি ছিল না। কিন্তু গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে একবার বিকট শব্দ পাই।'
মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে গত কয়েক মাস ধরে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে বিদ্রোহীরা। আর সেনা ও বিদ্রোহীদের এই লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের বাংলাদেশের মানুষের ওপরও।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, 'রাতের বেলায় বিকট শব্দের মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম।'
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে।'