শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অনুমোদনে দেরি হতে পারে

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রশ্নের মুখে, মূল্যায়নের নির্দেশ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:২৮

সস্তা, সহজলভ্য, সহজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া- অক্সফোর্ডের তৈরি সম্ভাব্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনটির গুণের তালিকা দীর্ঘ। মহামারিতে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ তাদের দিকেই তাকিয়ে। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত সেই ভ্যাকসিন নিয়ে ক্রমেই প্রশ্ন বাড়ছে। কারও কারও দাবি, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম দিকের ট্রায়ালের সাফল্য পুরোটাই 'অ্যাক্সিডেন্টাল' বা আকস্মিক। এই পরিস্থিতিতে অক্সফোর্ডের সঙ্গে জোট বাঁধা সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিবৃতিতে ইঙ্গিত মিলেছে, বিভ্রান্তি এড়াতে হয়তো নতুন করে ট্রায়াল শুরু করতে পারে তারা। এদিকে, প্রশ্ন ওঠায় ভ্যাকসিনটি মূল্যায়ন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (এমএইচআরএ) নির্দেশ দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ফলে ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে আরও দেরি হতে পারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স এদিকে, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আনার খবর দিয়ে দুনিয়ার তাবৎ গণমাধ্যমের শিরোনামে স্থান করে নেওয়ার কয়েকদিন পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর দ্রম্নত অনুমোদন পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বেচ্ছাসেবকদের একাংশকে একটি ডোজ দেওয়ার পর আরেকটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ না দিয়ে ভুল করে অর্ধেক ডোজ দেওয়ার পর ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ পাওয়ায় এর সত্যিকারের সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই প্রশ্ন তুলেছেন। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের অধ্যাপক পিটার ওপেনস বলেন, 'আমাদের ট্রায়ালের সম্পূর্ণ তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলো এই ফলকে কীভাবে দেখে।' ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর পর্যালোচনার ফল ভিন্ন হতে পারে বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক ঘোষণায় অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে বানানো তাদের পরীক্ষামূলক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে করা চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলে গড়ে ৭০ শতাংশ সাফল্যের কথা জানায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবককে দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটির সাফল্য ৬২ শতাংশ। আর যে খুব ছোট অংশকে ভুল করে দেড় ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে সাফল্যের হার পাওয়া যায় চোখ ধাঁধানো, ৯০ শতাংশ। এই ফল নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। বলা হচ্ছে, যেখানে দুটি পূর্ণাঙ্গ ডোজ দিচ্ছে ৬২ শতাংশ সাফল্য, সেখানে ভুল করে যাদের দেড় ডোজ দেওয়া হলো, তাদের সাফল্য কীভাবে ৯০ শতাংশ হয়? ভুল করে যে অর্ধেক ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তা কেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পূর্ণাঙ্গ ডোজের চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়? গবেষকরা এজন্য এখন অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের সম্পূর্ণ তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। এরই মধ্যে ভ্যাকসিনটি মূল্যায়ন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ট্রায়ালের পূর্ণাঙ্গ ফল মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করে পর্যালোচনার জন্য দিতে হয়। এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষগুলোর অনুমোদন পেতে কোনো ভ্যাকসিনকে অবশ্যই নূ্যনতম ৫০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হতে হবে। ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিনের অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাফল্যের কোনো নূ্যনতম মানদন্ড ঠিক করেনি। এসব বিবেচনায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা না থাকলেও তাদের ট্রায়ালের ফলের ব্যাপক পর্যালোচনার আগে এর জরুরি অনুমোদন মিলছে না বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে