শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে কার্যকর ওষুধ পাওয়ার দাবি বাংলাদেশি গবেষকদের

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তের পস্ন্যাটিলেট (রক্তের অণুচক্রিকা) বাড়াতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধে কার্যকর ওষুধ পাওয়ার দাবি করেছেন বাংলাদেশি একদল গবেষক। এলট্রম্বোপ্যাগ' নামের একটি জেনেরিক ওষুধের স্বল্পমাত্রার ডোজ ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োগ করে তারা কার্যকারিতা পেয়েছেন বলে চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্যা ল্যানসেটে তুলে ধরা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মৌসুমী সান্যাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এএইচএম নুরুন নবীসহ ১২ জনের একটি দল যৌথভাবে এই পরীক্ষা চালান।

ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) দুর্বল হয়ে পড়লে, লিভারের মারাত্মক জটিলতার কারণে অথবা লিউকোমিয়া (রক্তের ক্যানসার) রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার কারণে পস্ন্যাটিলেট কমে যায়। যেটিকে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা থ্রম্বোসাইটিস বলা হয়। এসব পরিস্থিতিতে এলট্রম্বোপ্যাগের কার্যকারিতা

প্রমাণিত। উপসর্গজনিত মিল থাকার কারণে ডেঙ্গুজনিত পস্নাটিল্যাট স্বল্পতায়ও এই ওষুধের কার্যকর হবে ধরে নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেটার লাইফ হাসপাতাল ও এ এম জেড হাসপাতাল থেকে পরিকল্পনামাফিক ডেঙ্গু রোগীদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে সাধারণ ডেঙ্গু রোগী ৭৭ জন ও রক্তক্ষরণসহ ডেঙ্গু রোগী ছিলেন ২৪ জন।

ল্যানসেটের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে পস্ন্যাটিলেট বৃদ্ধি ও রক্তক্ষরণ বন্ধে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের চিকিৎসায় এলট্রম্বোপ্যাগের উচ্চতর ডোজের (প্রতিদিন ৫০ মিলিগ্রাম) চেয়ে নিম্নতর ডোজ (প্রতিদিন ২৫ মিলিগ্রাম) প্রয়োগ বেশি নিরাপদ ও সমানভাবে কার্যকর হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

ওষুধটির ক্লিনিক্যাল প্রয়োগের বর্ণনা দিয়ে ডা. নুরুন নবী বলেন, এর রোগীরকে তিনটি দলে বিভক্ত করে দুটি দলের একটিকে প্রতিদিন একটি করে ৫০ মিলিগ্রামের ও আরেকটিকে ২৫ মিলিগ্রামের এলট্রম্বোপ্যাগ ট্যাবলেট সেবন করানো হয় এবং অপর দলকে মানসম্পন্ন প্রচলিত চিকিৎসা দেওয়া হয়। সব রোগীকেই সাত দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যাদেরকে ২৫ মিলিগ্রাম দেওয়া হয়, তাদের ৯১ শতাংশ রোগীর এবং যারা ৫০ মিলিগ্রাম পেয়েছিল, তাদের ৯৭ শতাংশ রোগীর পস্ন্যাটিলেট সাড়ে তিন লাখের উপরে উঠে যায়। আর অপর দলটির ৫৫ শতাংশ রোগী ওই সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক মাত্রা অর্জন করেন।

এদিকে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৮৮ রোগীর মধ্যে ৮৩ জনই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে একজন ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দিন ২১ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন। বর্তমানে ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৮৩ রোগী ভর্তি রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৭৩ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এছাড়া আইইডিসিআর-এ ৬টি মৃতু্যর তথ্য প্রেরণের পর প্রতিষ্ঠানটি পর্যালোচনা শেষে একটি মৃতু্য ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে