শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় অতিরিক্ত ফি নিলে এমপিও বাতিল

লটারি মনিটরিংয়ে উচ্চপর্যায়ের তিন স্তরের কমিটি বেসরকারি হাইস্কুলেও অনলাইনে ভর্তির আবেদন সেশন-ভর্তি ফির ক্ষেত্রে মানবিক হওয়ার নির্দেশ
ম নূর মোহাম্মদ
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনার কারণে আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। বৈশ্বিক কোভিড-১৯ কারণে লটারিতে শিক্ষার্থী বাছাইয়ে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেজন্য অন্যান্য বছরের মতো এবারও ভর্তি নীতিমালায় কঠোর হতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেশন ও ভর্তি ফি'তে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে। ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য তৈরি করা নীতিমালায় এমন কঠোর হুশিয়ার দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ই ডিসেম্বর এ নীতিমালা জারি করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

করোনার কারণে নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। লটারির স্বচ্ছতার বিষয়টিকে প্রাধ্যন্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভর্তিতে যে কোনো ধরনের অনিয়ম এড়াতে তিন স্তরের কমিটি কাজ করবে। এছাড়া স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি আলাদাভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া দেখভাল করবেন।

জানা গেছে, লটারির ভর্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরীতে মাউশির মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে ভর্তি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটির সদস্য থাকবেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়), ঢাকা জেলার ডিসির প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক। জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসির নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে ভর্তি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির সদস্য হবেন- জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী ও শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভর্তি কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটির সদস্য হবেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এছাড়াও ভর্তি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক নিয়ে একটি ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

নতুন ভর্তির নীতিমালায় আগামী শিক্ষাবর্ষে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে স্কুলের এন্ট্রি শ্রেণি ও আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে। আসনের চেয়ে আবেদন বেশি হলে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের বয়স জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ৬ বছর হতে হবে। বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে স্কুল পরিচালনা কমিটি সভা করে লটারির সময় নির্ধারণ করবে। তবে একই ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলিত ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থানা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লটারির তারিখ ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণ করবেন। লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করার সঙ্গে অপেক্ষমাণ তালিকাও তৈরি করতে হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হবে। প্রত্যেক স্কুল নিজস্ব উদ্যেগে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ ক্ষেত্রে স্কুল পরিচালনা কমিটি একাধিক উপ-কমিটি গঠন করতে পারবে। একই ক্যাচমেন্ট এলাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে শিক্ষার্থীরা যে কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। আর সরকারি হাইস্কুলে ক্যাচমেন্টভুক্ত এলাকার পাঁচটি স্কুলে আবেদন করা যাবে। ক্যাচমেন্ট এলাকার আগের মতোই নির্ধারিত হবে। ঢাকা মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুলের ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক আসন সংরক্ষণ করতে হবে। আগে ৪০ ভাগ সংরক্ষিত ছিল। বাকি কোটা আগের মতোই রয়েছে।

নানা ধরনের ফি সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তি ফরমের মূল্য চলতি শিক্ষাবর্ষের মতোই ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়ানো হয়নি। আগের মতোই রয়েছে। ঘোষিত শূন্য আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি ও নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত টিউশন ফির বেশি আদায় করা যাবে না। এবার বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট শেষ হওয়ার পর শূন্য আসন ঘোষণা করে ভর্তি কমিটির কাছে তালিকা জমা দিতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণ রোধে সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের পৌর শহর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা  স্বশরীরে দিতে হবে না। প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে জমা দিতে পারবেন। আবেদন ফরম বিতরণের পর অন্তত ৭ কার্য দিবস সময় দিতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ ও লটারির ফলাফল প্রকাশ করবে। ফলাফল এক বছর স্কুলে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে আবেদন ফরম জমা নেওয়ার সময়ে ফরমের নিচের অংশ ক্রমিক নম্বর দিয়ে শিক্ষার্থীকে ফেরত দিতে হবে।

নীতিমালায় আবেদন ফরমের মূল্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিও-বহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২০০ টাকা। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে মফস্বল এলাকায় ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১ হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় ২ হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি'সহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা নিতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির জন্য প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেয়া যাবে না। দরিদ্র, মেধাবী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যতদূর সম্ভব মওকুফ করে দিতে হবে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ভর্তি ও অতিরিক্ত ফি আদায় করলে প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলসহ কঠোর  ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রতি বছরই সেশন ফিসহ বিভিন্ন খাতে বেশি অর্থ নেয়ার অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। এবারও করোনার কারণে মানুষ ভালো অবস্থায় নেই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তারপরও যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তবে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চান না।

স্কুল ভর্তিতে কোটা গত বছরের মতো রাখা হয়েছে। ৫০ শতাংশ ক্যাচমেন্ট কোটার বাইরে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ২ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা, ১ শতাংশ লিলস্নাহ বোর্ডিংয়ের শিশু ও ২ শতাংশ কোটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৪০ শতাংশ আসনে সব শিশুই আবেদন করতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে