শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছর দেশের সাড়ে ৩ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পাবে

ম জাহিদ হাসান
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:৪১
করোনা ভ্যাকসিন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আগামী বছরের শুরুর দিকে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গেস্নাবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই বা গ্যাভি) টিকা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে দেশের ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে জনপ্রতি ২ ডোজ করে ৩৪ মিলিয়ন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকিসন পাবে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে দ্রম্নত মানসম্মত ভ্যাকসিন পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুলাই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৪ জুলাই গ্যাভি চিঠি পাওয়ার পর ১৮ সেপ্টেম্বর সম্মতি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে। চিঠিতে গ্যাভি আগামী ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম ধাপে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৪ মিলিয়ন মানুষের (৩ কোটি ৪০ লাখ) জন্য জনপ্রতি ২ ডোজ হিসেবে ৬৮ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকিসন দেবে। গ্যাভির পোর্ট ফোলিওতে যে ভ্যাকসিন নির্বাচিত হবে সেটাই ১ দশমিক ৬ থেকে ২ ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ কিনতে পারবে। ভ্যাকসিন আসার আগে একটি ন্যাশনাল গাইডলাইন ডেপেস্নায়মেন্ট পস্নান শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। তবে বাই লেটারেল এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী প্রথমে তিন কোটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, যা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে দেবে। এভাবে ভ্যাকসিন খরচ বাবদ ১৫ কোটি ডলার ছাড়া প্রায় ৩ কোটি মানুষকে ভ্যাকিসন দিতে ৩১৭ কোটি ৮৬ লাখ ১৩ হাজার ২২০ টাকা লাগবে। প্রতি ডোজে ১ দশমিক ২৫ ডলার খরচ পড়বে। তবে গ্যাভি ছাড়াও সরকার সরাসরি করোনা ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও দেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। চুক্তি নির্ধারিত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ জন্য ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকোর মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন ৪ ইউএস ডলার দরে কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে ভ্যাকসিন তৈরির পর সংরক্ষণ, দেশের নির্দিষ্ট পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পরিবহণ ব্যয় বাবদ ডোজপ্রতি ১ ডলার করে ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ বিভাগ ৭৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যে ভ্যাকসিন দেবে জনগণের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই ডবিস্নউএইচও অথবা ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রি-কোয়ালিফাইড, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বৈধ সনদপত্র ও বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের (ভিজিডিএ) অনুমোদনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রথমে ৩ শতাংশ, এরপর ৭ শতাংশ ও ১১ থেকে ২০ শতাংশ জনগণের জন্য ভ্যাকসিন দেবে। এভাবে ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ আসবে। কারণ গ্যাভির কোভ্যাক্সের শর্তই হলো বিশ্বের একটি দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশের বেশি একবারে দেবে না। এভাবে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে দিতে পারলে প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। আর ২০ ভাগ জনসংখ্যা হিসেবে ৩৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ আগে ভ্যাকসিন পাবে। দেশে যথাসময়ে ভ্যাকসিন আনার কার্যক্রম সম্পর্কে এমএনসি অ্যান্ড এএইচ লাইন ডিরেক্টর আরও বলেন, এখন গ্যাভির কাছে দেশের টেকনিক্যাল অ্যাসিসটন্টে সাপোর্ট পাঠাতে হবে, যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যদিও গ্যাভি ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যাশন্যাল ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট পস্ন্যান দেবে। কিন্তু এটি পাওয়ার আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারের কাছে এটির একটি চূড়ান্ত কপি জমা দেবে। আর গ্যাভি ৭ ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দরখাস্তগুলো রিভিউ করবে। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রম্নয়ারি থেকে জুনের মধ্যে গ্যাভি ভ্যাকসিন শিপমেন্ট করবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারবে আর যেটা আগে পাওয়া যায় সেটা দেওয়া শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে