মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২৭ শহীদের রক্তে রাঙানো শৈলকুপার কামান্না গণহত্যা

ম তারেক মাহমুদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

২৬ নভেম্বর ১৯৭১। দেশের বিভিন্ন এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসতে শুরু করে। ঠিক তখন ঝিনাইদহের শৈলকুপার কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হন ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনটিকে কামান্না দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতিবছর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে পালন করে ঐতিহাসিক কামান্না গণহত্যা দিবসটি। অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

উপজেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুমার নদের ধার ঘেঁষে ১০ নম্বর বগুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এই কামান্না গ্রাম। অবস্থানগত সুবিধার কারণে যুদ্ধচলাকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অস্থায়ী ঘাঁটি গড়ে ওঠে এই গ্রামটিতে। ২৩ নভেম্বর রাতে চারদিকে যুদ্ধের দামামা। এরই মধ্যে ৪২ জনের চৌকস রণকৌশলী মুক্তিপাগল যোদ্ধা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে কামান্নার মাধব চন্দ্রের পরিত্যক্ত বাড়িতে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা রাতে গ্রামটির মাধব চন্দ্র ভৌমিকের বাড়ির একটি টিনের ঘরে এবং ১০ জন গ্রামটির সামেনা বেগমের খড়ের ঘরে অবস্থান নেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের সংবাদ রাতের আঁধারে স্থানীয় রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের গোপন তৎপরতায় দ্রম্নত পৌঁছে যায় ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও মাগুরার পাক আর্মি ক্যাম্পে। তারা ওই রাতেই চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাদের ওই অস্থায়ী আস্তানা। ২৬ নভেম্বর রাতে চারপাশ ঘিরে ফেলে গর্জে ওঠে পাক-হানাদারদের আগ্নেয়াস্ত্র। টিনের বেড়া ভেদ করে ছুটে আসতে থাকে বুলেট। পাক বাহিনীর হঠাৎ আক্রমণে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ঘুম ভেঙে হতবিহ্বল ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ করলেও বেশিক্ষণ টিকতে না পারায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। যে-যেভাবে পেরেছেন, ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। ফলে কেউবা ঘরের মধ্যে, কেউবা ঘরের বারান্দায় আবার কেউ উঠানে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন। এই যুদ্ধে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

পরদিন সকালে কামান্না হাইস্কুলের পাশে বয়ে যাওয়া কুমার নদের পাড়ে পাঁচটি গণকবরে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়।

বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, এবারও সরকারি-বেসরকারি ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে। তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধার গণকবর প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে