শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সা ক্ষা ৎ কা র

হাইব্রিড ধানে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো হবে :আসাদুলস্নাহ

ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। চলতি বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল ধানের মাধ্যমে চার লাখ টন চালের উৎপাদন বাড়ানো হবে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে হাইব্রিড ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের বীজসহ প্রণোদনা দেওয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুলস্নাহ যায়যায়দিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আলতাব হোসেন
নতুনধারা
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যায়যায়দিন : করোনাভাইরাসের মহামারিতে খাদ্য উৎপাদন, মজুত ও সংকটের আশঙ্কা কতটা রয়েছে বলে মনে করছেন?

মো. আসাদুলস্নাহ :করোনাকালেও বোরো আউশ-আমন ধান ও শাক-সবজিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের কথা বলা হলেও বাংলাদেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুত রয়েছে। ধান উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন তৃতীয়। চলতি বোরো মৌসুমে মোট দুই কোটি পাঁচ লাখ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয় দুই কোটি এক লাখ টন। বোরো উৎপাদনের জন্য ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭২০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে।

যাযাদি : ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

আসাদুলস্নাহ :হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ বাড়িয়ে প্রতি বছর চার লাখ টন করে বেশি চাল উৎপাদন করা হবে। চলতি বোরো মৌসুমেই চার লাখ টন ধান বেশি উৎপাদন হবে। হাইব্রিড ধানের ফলন হেক্টরে চার দশমিক নয় টন। আর দেশি জাতের ধানের গড় উৎপাদন সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৮ টন হেক্টরে। করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কথা বলছে। ধানের পাশাপাশি এবার অন্যান্য ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ধান বীজ, সেচকাজে বিদু্যৎ ও ডিজেল সরবরাহ এবং সারের দাম কমিয়ে সরকার কৃষকের জন্য সহজলভ্য করেছে। বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যাযাদি : জলবায়ুর প্রভাবে বদলে যাচ্ছে কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা। বিষয়টি বিচেনায় নিয়ে আপনারা কী করছেন?

আসাদুলস্নাহ :জলবায়ুসহ নগরায়ণের ফলে দেশে কৃষি জমি তো প্রতিদিনই কমছে। তাই হাইব্রিডের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে হবে। লবণাক্ত জমিতে এবার হাইব্রিড ধান আবাদের কথা ভাবা হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ সহিষ্ণু ধানের জাত দেওয়া হচ্ছে। শুধু ধান নয়, সবজি, ডাল জাতীয় শস্য, মসলা ফসলেও হাইব্রিড জাত বাড়ানো হচ্ছে।

যাযাদি : প্রায়ই কৃষি শ্রমিক সংকটের কথা শোনা যায়। এ সংকট কাটাতে আপনাদের কী পরিকল্পনা রয়েছে?

আসাদুলস্নাহ :কৃষি শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিন হাজার ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা ৭০ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন আর সমতল অঞ্চলের কৃষকরা ৫০ শতাংশ ভর্তুকি পাবেন। আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ, তেল জাতীয় শস্যের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। বিদেশ থেকে এসব খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে না।

যাযাদি : খাদ্যশস্য উৎপাদন বিষয়ে আপনার প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

আসাদুলস্নাহ : দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে তিন কোটি ৭০ লাখ টন। আর চাহিদা প্রায় তিন কোটি। এর মধ্যে ৫০ লাখ টন বীজ ধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে খাদ্য আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। বরং উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। চলতি রবি মৌসুমের জন্য তিন লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হচ্ছে। ভুট্টা চাষ হচ্ছে চার লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে। প্রায় ৪০ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে আলু হচ্ছে। দুই লাখ ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ হচ্ছে।

যাযাদি : গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। মাঠে থাকা আমন ধানের বিষয়ে কী পরিকল্পনা নিয়েছেন?

আসাদুলস্নাহ : মাঠে থাকা আমন ধান গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৪৬ শতাংশ কাটা হয়েছে। এবার গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম পাচ্ছেন কৃষক। ১১শ থেকে ১৩শ টাকা মণ দরে আমন ধান বিক্রি হচ্ছে। ধানের দামে কৃষক খুশি। এবার আমন মৌসুম থেকে এক কোটি ৫৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উঁচু এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলেও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং আউশ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকের ন্যায্যমূল্য ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে