বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিরল রায়

সুনামগঞ্জের ৪৭ দম্পতিকে মিলিয়ে দিলেন আদালত

ম স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ
  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর করা ৪৭টি মামলার আসামিদের সাজা না দিয়ে দাম্পত্য জীবনে ফিরে যাওয়ার শর্তে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুর ১টায় সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই ব্যতিক্রমধর্মী রায় দেন।

আদালতের হস্তক্ষেপে স্বামীরা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে আসবেন এমন খবর পেয়ে ফুল নিয়ে এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাদের স্ত্রীরা। এ সময় অনেককে নিজের শিশুসন্তান কোলে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

আদালত সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার হয়ে এই ৪৭ নারী তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন। মামলার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যুদ্ধাংদেহী অবস্থান তৈরি হয়। এতে তাদের সন্তানদের জীবন, নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান, আদর-যত্ন, ভালোবাসা, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যায়। স্ত্রী স্বামীর ঘরছাড়া হয়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের পথে হাঁটছিলেন। সেই অনিশ্চিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে সংসারে-সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করতে আসামিদের খালাস দেন আদালত।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায়ও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৪৭ দম্পতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

আদালতের আপোসনামায় ৪৭ দম্পতি অঙ্গীকার করেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার ধর্ম পালন করবেন তারা। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে উভয়কেই যথাযোগ্য মর্যাদা দেবেন। স্বামী তার স্ত্রী বা তার মা-বাবা ও অভিভাবকের কাছে

যৌতুক দাবি করবেন না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবেন। স্বামী কখনো স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, স্ত্রীকে নির্যাতন করলে বা যৌতুক দাবি করলে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, 'আদালত পৃথক ৪৭টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তিই হয় তা নয়, পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয়; তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে এসব মামলার রায়ে। সব মামলার বাদী-বিবাদীকে আপোসে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন- স্বামী-স্ত্রীকে মিলেমিশে পরিবারে একত্রে বসবাস করতে হবে। ভবিষ্যতে তারা ঝগড়-বিবাদ না করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে