শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে শত বছরের রেকর্ড পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ

রংপুর প্রতিনিধি
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
রংপুরে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়কে পানি, পানি ঘরবাড়িতেও। ছবিটি রোববার নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে থেকে তোলা -যাযাদি

একশ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে রংপুর মহানগরীসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা। টানা ১০ ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে নগরীর শতাধিক পাড়া-মহলস্নার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নগরীর প্রধান সড়ক, ঘরবাড়ি ও অলিগলি সব খানেই এখন কোমর পানি। গত শনিবার রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ৮ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। রংপুর আবহাওয়া অফিসের প্রধান মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, ১৪ ঘণ্টায় ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। তিনি জানান, শত বছরেও রংপুরে এরকম বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেল। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নিষ্কাশন সুযোগ না থাকায় পানিতেই চলছে যাতায়াত। নগরবাসী বলছেন, ২৫-৩০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত দেখেননি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিচু এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। বেশিরভাগ রাস্তা কোমর থেকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর শাপলাচত্বর, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, বোতলা, খেড়বাড়ি, বাহারকাছনা, মাস্টারপাড়া, জুম্মাপাড়া, হাজীপাড়া, চামড়াপট্টি, করণজাই রোড, সেনপাড়া, নিউ সেনপাড়া, আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামারপাড়া, জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, মুলাটোল আমতলা, গনেশপুর, বাবুপাড়া, লালবাগ কেডিসি রোড, বাস টার্মিনাল, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ শতাধিক পাড়া-মহলস্নার অলিগলিসহ প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ বসতঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছেন লোকজন। ছন্নছাড়া হয়েছে নগরবাসীর জীবন। কয়েক হাজার পরিবার ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নগরীর সমাজকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ভবন খুলে দিয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন জানান, এত বড় একটি দুর্যোগে আগে থেকে সিটি করপোরেশন অথবা আবহাওয়া অফিস কেউই কোনো সতর্কবাণী বা পূর্বাভাস দেয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। আশ্রয় নেওয়া মুলাটোল থানা মোড় এলাকার গৃহিণী আছিয়া বেগম বলেন, বাড়ির বিছানার ওপরে পানি উঠেছে। সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ব্যবসায়িক কয়েক লাখ টাকার বই নষ্ট হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরজাহান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমি ছোট ব্যবসায়ী। ভাড়া বাড়িতে থাকি। হঠাৎ এই পানিতে মালামালসহ বাড়ির সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসারের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল।' বাড়িতে পানি উঠায় রান্না করতে না পেরে দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। অধিকাংশ হোটেল বন্ধ থাকায় খাবার কিনে খেতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই না খেয়ে আছেন। এতে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় অনেক স্বেচ্ছাসেবী। নিজেদের উদ্যোগে খাবার রান্না করে সরবরাহ করছেন তারা। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজন সহসাই পাচ্ছেন না যাতায়াতের বাহন। মিললেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে পানি বন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল। তারা নৌকায় করে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদু্যৎ সংযোগ। অপরদিকে জেলার তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদীর নিম্নাঞ্চলে আবারো দেখা দিয়েছে বন্যা। ভারি বর্ষণ আর বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি জমি, ফসল আর পুকুর-বিল তলিয়ে গেছে পানিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, শ্যামা সুন্দরী ক্যানেলের পানি কমে আসলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিবন্দি এলাকা থেকে পানি নেমে আসবে। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানিয়েছেন, পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে সিটি করপোরেশনের সব কাউন্সিলরকে নির্দেশ দিয়েছেন। পয়ঃনিষ্কাশনের খাল ভরাট হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি সরে গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে