বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছে : মির্জা ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
মির্জা ফখরুল ইসলাম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন নৈরাজ্য চলছে। সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও ভয়াবহ। এটাই দেশের প্রকৃত চিত্র। কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। বিশৃঙ্খলা চলছে, নৈরাজ্য চলছে এবং সেটা আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে প্রায় ৫০ বছর হতে যাচ্ছে স্বাধীনতার। আর দেশে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসছে, তখনই এ ধরনের নৈরাজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ একটা ব্যাপারে সফল হয়েছে, তারা সারাদেশের সব মানুষের মধ্যে একটা ত্রাস সৃষ্টি করতে পেরেছে, একটা ভয়ভীতি সৃষ্টি করতে পেরেছে। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে একটা নিরাপত্তার অভাব বোধ করা, ভয়ভীতি কাজ করা এবং এক সময় যারা উচ্চ কণ্ঠ ছিলেন, মানুষের দাবি-দাওয়া, সমস্যা নিয়ে কথা বলতেন, তারাও এখন কথা বলছেন না। সাংবাদিকরাও এখন কিছু লিখতে-বলতে সাহস পাচ্ছেন না। সাংবাদিকরা কথা বলেননি এ রকম কখনো দেখিনি। তাদের এখন ব্যস্ত রাখা হয়েছে। বিএনপির কোথায় কি ত্রম্নটি আছে, সেগুলো দেখে বেড়াচ্ছেন এবং সেগুলো বের করে করে সামনে আনছেন। এ ছাড়া তাদের উপায় তো নেই। তিনি বলেন, যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জোর করে নিয়েছে এবং যারা তাদের অপকর্ম করতে পুলিশকে ব্যবহার করেছে, সেই পুলিশ শৃঙ্খলায় কেনো থাকবে। জেলা শহরগুলোর আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক মিটিংগুলোতে এসপি যে বক্তব্য রাখেন, সেই বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতার চেয়েও ১০ গুন বেশি। সে নিজেই স্বাধীনতার বড় সৈনিক, সে নিজে এই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৈনিক হয়ে যান। এভাবেই সরকার তার সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রবাসীদের ফেরার বিষয়টি নিয়ে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। প্রবাসীদের আসার সময় যে সুরক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা দেওয়া হয়নি। পরে অর্থনৈতিক যে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও দেওয়া হয়নি। ফলে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এখন প্রবাসীদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারেও যেটা আগে থেকে বুঝা উচিত ছিল সরকারের, সেটা তারা করেনি। এখন এমন একটা সময়, যেখানে প্রবাসীদের জীবিকা বিপন্ন হবে এবং দেশের রেমিট্যান্স বিপন্ন হয়ে যাবে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কক্সবাজার থেকে প্রায় সব পুলিশ সদস্যকে বদলি করে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, কক্সবাজারে এতদিন ধরে যে ক্রসফায়ারগুলো হয়েছে, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডগুলো হয়েছে, এর পেছনে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মদদ ছিল। কোভিড-১৯ এর বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এখনো চূড়ান্তভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন পায়নি। ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থও যেন সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত না ঘটায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণ যেন কোনো ব্যয় ব্যতিরেকে এই ভ্যাকসিন পেতে পারে, এর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। সরকার কর্তৃক নিজের ফোন আড়ি পাতার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইনমেডনিটি নামে একটা নাটক প্রচার করা হবে বিভিন্ন চ্যানেল থেকে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, তারা এত ভয়ভীতির মধ্যে আছেন, ফোনে কথা বলাটাও তাদের জন্য বিপদজনক। এটা কিন্তু সমস্ত সমাজে সমস্ত জায়গায় হয়ে গেছে। ফোন ২৪ ঘণ্টা রেকর্ড হয়, ২৪টি ঘণ্টা এবং এটা প্রিন্টটেড হয়। মেশিন লাগানো আছে, যেটাতে প্রিন্ট হচ্ছে। এটা থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। এ রকম অবস্থাকে 'উত্তর কোরিয়া'সহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা হচ্ছে যে, ডিপ স্টেট হলে যেটা হয়- সার্ভালেন্স। নর্থ কোরিয়ার '১৯৮৪' বলে একটি ছবি আছে। যাতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে সাইকোলজিক্যালি, মেন্টালি এই যে ফিয়ার- এটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে সব কিছু প্রতিবাদ থেকে সে বিরত থাকে। তিনি বলেন, মিসরে এ ঘটনা ঘটা শুরু করেছে। এরও আগে নর্থ কোরিয়াতে এগুলো চলছে। ফিলিস্তিনের ওপর আলজাজিরা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অনেকগুলো ফিচার করে। এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং, টর্চারিং, কাস্টোডি, এরপর ইসরাইলের সমস্ত ঘটনাগুলো নিয়ে আসছে তারা। ভয়াবহ। এসব বিষয় বাংলাদেশের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এখন পৃথিবীটা কেমন যেন হয়ে গেছে। নির্মলেন্দু গুনের একটি কবিতা ছিল- কোন দিকে পালাবে তুমি, কোনো দিকে পথ নেই। উত্তরের উত্তঙ্গ পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর- কোন দিকে পালাবে তুমি, কোনো দিকে পথ নেই। আজকে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের এই একটাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে