মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
সংক্রমণের বিশ্বরেকর্ড

একদিনে ৯০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত ভারতে

এর আগে কোনো দেশে একদিনে এত বেশি রোগী পাওয়া যায়নি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
ভারতে হুহু করে বাড়ছে করোনাভাইরাস -ফাইল ছবি

ভারতে একদিনে রেকর্ড ৯০ হাজারের বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মহামারির মধ্যে এর আগে কখনোই কোনো দেশে ২৪ ঘণ্টায় এত বেশি কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া যায়নি। এদিক দিয়ে এটি বিশ্বরেকর্ড। আগেরদিনও দেশটি জোড়া রেকর্ড গড়েছে আক্রান্তের সংখ্যায়। একটি দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বরেকর্ড। একদিনে দেশটিতে প্রায় সাড়ে ৮৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়। অন্যটি হলো, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়ায় ৪০ লাখ। এতে ব্রাজিলের মোট আক্রান্তের সংখ্যাকেও প্রায় ছুঁয়ে ফেলে ভারত। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এনডিটিভি, এবিপি নিউজ কয়েকদিন আগেও একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের রেকর্ড ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটিতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি একদিনে ৭৭ হাজার ২৯৯ জনের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছিল। একদিনে ৭৮ হাজারের বেশি শনাক্ত রোগী নিয়ে গত সপ্তাহেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ওই রেকর্ড ভেঙেছিল। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে শনাক্ত রোগীর তালিকায় নতুন করে ৯০ হাজার ৬৩২ জন যুক্ত হয়েছে। এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লাখ অতিক্রম করেছে। তবে এদের মধ্যে ৩২ লাখ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে করোনাভাইরাসে এক হাজার ৬৫ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে ভারতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। যে হারে দেশটিতে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাতে সরকারি হিসাবে আজকের মধ্যেই কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যায় ভারত ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তেমনটা হলে ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় স্থানে উঠে যাবে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে রোববার সকাল পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৬২ লাখ ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে; দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতু্য হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজারের বেশি। ব্রাজিলে শনাক্ত রোগী ৪১ লাখ ২৩ হাজার, মৃতু্য ছাড়িয়েছে এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি। এদিকে, দিলিস্নর 'অল ইনডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স'র পরিচালক রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, 'করোনাভাইরাস বড় শহরগুলো থেকে দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ায় এ বছর যে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সমাপ্তি হচ্ছে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত।' সংক্রমণ রেখা সমতল হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তার। দেশটির কিছু অঞ্চল সংক্রমণের 'দ্বিতীয় ঢেউ' দেখছে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো এবং জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে বলে অনুমান তাদের। ভারতে গত প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিনই বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে; এর মধ্যেই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনীতি ফের সচলে বিধিনিষেধ শিথিলের পথে হাঁটছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (সোমবার) থেকে রাজধানী দিলিস্নর একাংশে মেট্রো রেল চলাচলও শুরু হচ্ছে। ভারতে বিশ্বের মধ্যে করোনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হলেও দেশটিতে সুস্থতার হারও বেশি আশা জাগানিয়া। নতুন করে গত একদিন আরও ৭০ হাজার কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়েছে; যা এযাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ। সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত যারা সুস্থ হয়েছে, এর মধ্যে ৬০ শতাংশই পাঁচটি রাজ্যে। ভারতে যে ৩০ লাখ সুস্থ হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে; ২১ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে তামিলনাডুতে ১২.৬৩, অন্ধ্রপ্রদেশে ১১.৯৩, কর্ণাটকে ৮.৮২ এবং উত্তরপ্রদেশে সুস্থ হয়েছে ৬.১৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে করোনায় মৃতু্যর হার এক দশমিক ৭৩ শতাংশ; যা করোনায় মৃতু্যর ক্ষেত্রে বৈশ্বিক হারের চেয়ে কম। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত আক্রান্তদের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়েছে। আইসিইউতে দুই শতাংশ এবং অক্সিজেন সাপোর্ট লেগেছে ৩.৫ শতাংশ রোগীর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে