বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ঈদযাত্রার অচেনা রূপ

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩০ জুলাই ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় ট্রেন -বাংলা ট্রিবিউন

আর মাত্র তিনদিন পর ঈদ। এ সময়ে বাস-লঞ্চ-ট্রেনে গাদাগাদি করে শহুরে মানুষের গ্রামে ফেরার কথা। বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনগুলো হয়ে উঠবে জনসমুদ্র। সড়ক-মহাসড়কে জমে উঠবে দীর্ঘ যানবাহনের সারি। বাস-ট্রেনের ছাদে জীবন ঝুঁকি নিয়ে চড়ে বসবে নিম্নআয়ের হাজার হাজার মানুষ। পদে পদে ভোগান্তি ঠেলে আনন্দের ঝিকিমিকিতে ঘরে ফেরার কথা শেকড়ের টানে। এতদিন ঈদের আগে এ চিত্রই স্বাভাবিক থাকলেও এবার কোথাও এসবের কিছু নেই। বাস-লঞ্চ-ট্রেনে গাদাগাদি ভিড় দূরে থাক, সব আসনে যাত্রীর দেখা নেই। সড়ক-মহাসড়কে কোথাও নেই কোনো যানজট। পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় দূরপালস্নার যাত্রার বাস মালিকরা অনেকে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। বরিশাল-পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ লঞ্চ চলছে রোটেশন মেনে। এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, দূরপালস্নার যাত্রার অধিকাংশ বাসের একাধিক আসন ফাঁকা পড়ে আছে। পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় বেশকিছু গাড়ি নির্ধারিত সময় টার্মিনাল না ছাড়ায় যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকদের বাক-বিতন্ডতা হচ্ছে। বিগত সময় ঈদের আগে পরিবহণের বিশ্রামাগারগুলো কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও এবার তা অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে আছে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে সেলসম্যানরা অলস সময় পার করছে। ঈদের আগে প্রতি ১০/১৫ মিনিট অন্তর একাধিক লোকাল বাস টার্মিনাল ছেড়ে গেলেও এবার এক একটি বাস যাত্রী পূর্ণ হতেই আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। লোকাল বাসের মালিকরাও তাদের বাসের সংখ্যাও অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। আগে ঈদের আগের ট্রেনের টিকিট কাটতে আগের দিন রাত থেকে শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও এ চিত্র যেন উধাও হয়ে গেছে। একঘণ্টা পর যে ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যাবে অনেককে সে ট্রেনেরও টিকিট কাটতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল অবধি অধিকাংশ ট্রেনই বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা রেখেই স্টেশন ছেড়েছে। রেলস্টেশনের কুলিরা জানায়, আগে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের যে চাপ থাকত, এবার ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পরও ততটা ভিড় হবে কিনা তা নিয়ে তারা সংশয়ে রয়েছে। তাদের ভাষ্য, এ সময়ে তাদের যাত্রীর মাল টানাটানিতে হিমশিম থাকার কথা থাকলেও তারা এখন অনেকে সারা দিন স্টেশনে তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে থেকেও খাওয়ার টাকা যোগাড় করতে পারছে না। ঈদের ছুটি কম হওয়ায় যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের লাগেজও ছোট হওয়ায় অনেকে তা নিজেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কুলিরা। এদিকে মঙ্গলবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকলেও আগের মতো ততটা ভিড় নেই। যাত্রী স্বল্পতার কারণে বেশকিছু লঞ্চ নির্ধারিত সময়ে ঘাট ছেড়ে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে। অথচ রোজার ঈদেও প্রতিটি লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই নির্ধারিত সময়ের আগেই ঘাট ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ঢাকা-খুলনাগামী ঈগল পরিবহণের কাউন্টার ম্যানেজার জানান, আগের ভাড়া থেকে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে বাসে মোট ২০ জন যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। অথচ আগের ভাড়া থেকেও ভাড়া কমিয়ে ২০ জন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ বাসেই তিন থেকে ছয়টি সিট খালি থেকেই যাচ্ছে। পরিবহণ শ্রমিকদের ধারণা, মানুষের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই, তাই তারা বাড়ির পথ ধরছে না। যশোরগামী হানিফ পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার আজাদ জানান, তাদের পরিবহণের সব টিকিট বিক্রি হলেও বেশিরভাগ পরিবহণেরই অধিকাংশ টিকিট অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। ২০ জন যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়ার কথা থাকলেও কেউ কেউ ১৫/১৬ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। সোহাগ পরিবহণের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদের আগে তারা যেসংখ্যক গাড়ি ছাড়ত তার এক-তৃতীয়াংশ তারা কমিয়ে দিয়েছে। অথচ এরপরও অধিকাংশ ট্রিপে দুই চারজন করে যাত্রী কম থাকছে। এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে আরও করুণ অবস্থা দেখা গেছে। সেখানে অবস্থানরত বাস কাউন্টার মাস্টারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০ শতাংশ যে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার থেকেও কম ভাড়া নিয়েও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক বাস ৭/৮ জন যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। ক্ষতি পোষাতে কেউ কেউ আবার বাসে লোকাল যাত্রী তুলেছে। যাত্রী না পাওয়ায় অনেক পরিবহণ নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। একই রকম যাত্রীহীন চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। বাস কাউন্টারে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। সুযোগ বুঝে অনেকে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করছে। কোনো কোনো বাস নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে একশ' টাকা কম নিয়েও টার্মিনাল ছেড়েছে বলে পরিবহণ শ্রমিকরা স্বীকার করেছেন। এদিকে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলেও বাস-লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে যাত্রী কিংবা পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে ততটা সতর্ক থাকতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ বাসেই জীবাণুমুক্ত না করেই যাত্রী তোলা হয়েছে। আবার কোনো কোনো পরিবহণে এ ব্যাপারে লোকদেখানো তৎপরতা চালিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে