রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্যারিস অলিম্পিকের পর্দা উঠছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৮
ছবি-সংগৃহিত

‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বিশ্ব অলিম্পিক গেমসের পর্দা উঠছে আজ। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চার বছর পর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। শুক্রবার জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠবে রঙিন এই আসরের।

অলিম্পিক এমন একটি আসর যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক পতাকাতলে মিলিত হয়ে থাকেন। এখানে জয়গান হয়ে থাকে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের। বিশ্বব্যাপী যে হানাহানি, যুদ্ধংদেহী মনোভাব সেটা দূর করতে অলিম্পিক অনেকটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

প্যারিস অলিম্পিকের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই মেগা আসরের। চার ঘণ্টার এই বর্ণাঢ্য আয়োজনের শুরুতে ঐতিহ্য মেনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিসকে। আর সবার শেষে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে আয়োজক দেশ ফ্রান্সকে। নৌকায় করে প্যারেডে যোগ দেবেন ক্রীড়াবিদরা। যা পুরো আয়োজনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ দেবে।

অলিম্পিকের এবারের আসর শুরু করতে প্রস্তুত প্যারিস। শহরজুড়ে সাজসাজ রব। গেমস শুরুর আগেই ফুটবল ও রাগবি দিয়ে শুরু হয়ে গেছে পদকের লড়াই। সব অ্যাথলেটরা এখনো প্যারিসে পৌঁছায়নি। তবে সারা বিশ্বের কয়েক হাজার সংবাদকর্মীর ভিড়ে মুখরিত মিডিয়া সেন্টার। কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে।

আইফেল, লু ভ, সজ এলিজে, প্যারিসের সব আইকনিক স্থাপনা সেজেছে অলিম্পিক সাজে। তবে এর মাঝেও ব্যাতিক্রম পার্ক দু ভেল। এখানকার প্রস্তুতি, নিরাপত্তা, জনসমাগম সবচেয়ে বেশি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত প্যারিস। বিগেস্ট শো অন আর্থকে সামনে রেখে দশ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি হলেও পর্যটকের সংখ্যা এখনো কম। তার তুলনায় গণমাধ্যম কর্মীদের আনাগোনা বেশি। শহরজুড়ে ছড়িয়ে প্রায় ১৭০ দেশের ৩৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক।

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রবেশ নিষেধ। ৪৫ হাজার পুলিশ ও প্যারামিলিটারি থাকছে নিরাপত্তার দায়িত্বে। সেনাবাহিনীর দশ হাজার সৈন্য ও ২০ হাজার বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। বড় বড় ভবনের ছাদে রাইফেল হাতে স্নাইপার রাখা হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী ধরতে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা।

প্যারিসের বাইরে মার্শেই, লিল আর তাহিতিতে হবে একাধিক ডিসিপ্লিন। একসঙ্গে ১ হাজারের বেশি সংবাদকর্মীর কাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মেইন প্রেস সেন্টার। যা ছিল প্যারিসের সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ড।

অলিম্পিক কমিটির বাইরেও স্থানীয় আয়োজকরা খুলেছে প্যারিস মিডিয়া সেন্টার। ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে সংবাদ সম্মেলন। আছে ইয়োগা, মেডিটেশনের সুবিধা। অ্যাথলেটদের মাঠের লড়াই আর গেমস ভিলেজের ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে আগেই। এবার লড়াই শুরুর পালা।

সবমিলিয়ে ৩২টি ডিসিপ্লিনের আয়োজন থাকছে প্যারিস অলিম্পিকে। যেখানে ৩২৯ ইভেন্টে লড়বেন প্রায় ১০ হাজার অ্যাথলেট। অলিম্পিকের সুদীর্ঘ ইতিহাসে কখনোই কোনো প্রাইজমানি ছিল না। তবে এবারই প্রথম প্রাইজমানি পাবেন অ্যাথলেটরা। শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া এবারের আসরে যোগ করা হয়েছে ব্রেকিং এবং কায়ক্রশ নামের দুটি নতুন খেলাও। সেই সঙ্গে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে ৭টি ডিসিপ্লিনে। মেগা এই আসরের বাজেটও এবার বেড়েছে। টোকিও অলিম্পিকের চেয়ে ছয় হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেড়ে সার্বিক খরচ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটিতে।

এবারের বাজেটের বড় একটা সংখ্যা খরচ হবে নিরাপত্তার জন্য। কেননা, ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় থাকবেন ৪৫ হাজার পুলিশ। কেননা এবারের উদ্বোধন কোনো স্টেডিয়ামে হবে না। আইফেল টাওয়ার এবং সেইন নদীতে হবে মনোমুগ্ধকর আয়োজন। নদীর ৬ কিলোমিটার পথজুড়ে বিস্তৃত থাকবে এই অনুষ্ঠান। যে কারণেই নিরাপত্তায় বিশেষ জোর আয়োজকদের। আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছেন যে, সাফল্যের সঙ্গে অলিম্পিক আয়োজনে তারা প্রস্তুত। এই মুহূর্তে সমর্থকদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছেন প্যারিস অলিম্পিকের আয়োজকরা।

স্বপ্নের অলিম্পিকে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত গোটা দুনিয়ার অ্যাথলেটরাও। ইতোমধ্যেই প্যারিসে পৌঁছে গেছেন খেলোয়াড়দের অনেকে। বাকিরাও প্রস্তুত ক্রীড়ার এই মেগা মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরতে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে অলিম্পিকের পর্দা উঠলেও টুর্নামেন্টের অন্যতম জনপ্রিয় ইভেন্ট ফুটবল শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। যদিও আর্জেন্টিনা ও মরক্কোর ম্যাচের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

বিশ্ব অলিম্পিকে এই মহাক্রীড়াযজ্ঞে চার ইভেন্টে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ অংশ নেবেন। এরা হলেন- আরচার সাগর ইসলাম, সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি ও সোনিয়া খাতুন, স্পিন্টার ইমরানুর রহমান ও শুটার রবিউল ইসলাম।

বরাবরের মতো এবারও অলিম্পিকে পদকে চোখ না রেখে অংশগ্রহণটাই বড় করে দেখছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য অলিম্পিক অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ। বাস্তবতা অজানা নয় বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদেরও। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্যটাও জানা। তাই সুযোগ পাওয়া ৫ ক্রীড়াবিদের লক্ষ্য এবারের আসরে নিজেদের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

পাঁচ ক্রীড়াবিদের মধ্যে আরচার সাগর ইসলাম নিজ যোগ্যতা বলে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন। বাকি চার ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে যাচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে। এবারও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কেবলই অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে। কারণ অলিম্পিকে লড়াই করা ও সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিকমানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো। যার কোনোটাই বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। তবে সাগর-সোনিয়া-রাফিরা অলিম্পিকের এই আসরে পারফরম্যান্সে উন্নতি দেখাতে চান।

আরচারি ইভেন্টে ৬১ জন প্রতিযোগী। যার মধ্যে বাংলাদেশের সাগর ইসলাম একজন। তিনি জানান, অলিম্পিকে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি। লক্ষ্য থাকবে ভালো কিছু করার। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছেন অলিম্পিকে। তিনি জানান, অলিম্পিকে ভালো কিছু করার লক্ষ্যই তার। তবে হঠাৎ করে বিরাট কিছু করে দেখানো সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নেয়া সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি জানান, নিজের ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিংটাই এবারের অলিম্পিকে করে দেখাতে চান তিনি। এ লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তত করছেন। সাঁতারু সোনিয়া মনে করেন, অলিম্পিকে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। বিশ্বসেরা সাঁতারুদের সঙ্গে লড়াই করটাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। তার কথায়, ‘অলিম্পিকের মতো এত বড় একটা আসরে খেলার সুযোগ পাওয়া মানে বড় একটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার মতো। আমার লক্ষ্য থাকবে সেখানে নিজের সেরাটা দেওয়া। নিজের ইভেন্টে সেরা টাইমিং করা। মানসিকভাবে ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান গেমসে পদকজয়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতারুদের তুলনা করার সুযোগ নেই। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সেটা সবকিছুতেই।’

অন্যদিকে শুটার রবিউল এবারই প্রথম অংশ নিতে যাচ্ছেন অলিম্পিকের মতো বড় আসরে। প্রথমবার সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত এই শুটার, ‘আমার লক্ষ্য ছিল নিজ যোগ্যতায় অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার। চেষ্টা করেছিলাম, ভাগ্য সহায় হয়নি। তাই সেটি সম্ভব হয়নি। এখন ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে অলিম্পিকে অংশ নিতে যাচ্ছি। প্রত্যাশা সেখানে নিজের সেরাটাই দেওয়ার। আমার লক্ষ্য সেরা আটে খেলা। তবে অলিম্পিকের মতো বড় আসরে সেরা আটে খেলাটা সহজ কিছু নয়। যদি সেটি করতে পারি আর সেদিন যদি ভাগ্য অনুকূলে থাকে পদকও আসতে পারে। তবে এখনই পদকের আশা করছি না। আমার প্রত্যাশা হলো সেরা আট।’

১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের আসর থেকে অলিম্পিকে ক্রীড়াবিদ পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এত বছরেও জোটেনি কোনো পদক। প্রতি আসরেই ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’ এমন মূল মন্ত্র নিয়ে অংশ নেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে