পেসারদের সুইং নেই, বিরক্ত কপিল

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০২০, ২১:০২

ক্রীড়া ডেস্ক

 

 

 

 

ক্রস সিম ডেলিভারি, নাকল বল কিংবা এমন আরও অনেক বৈচিত্র্য যোগ হয়েছে এখনকার পেসারদের বোলিংয়ে। কিন্তু ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মৌলিকত্ব। সত্যিকারের সুইং বোলার এখন পাওয়াই দায়! এই যুগের পেসারদের এমন সুইং বিমুখতায় ভীষণ বিরক্ত কপিল দেব। ভারতের পেস কিংবদন্তির মতে, সুইং করাতে না জানলে বাকি সবই বৃথা।

 

নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে ভারতের পেস প্রতিক‚ল উইকেটেও বছরের পর বছর দুর্দান্ত সুইং বোলিং উপহার দিয়েছেন কপিল। একসময় তিনি ছিলেন টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (৪৩৪)। সুইং বোলিংয়ের গুরুত্ব তিনি জানেন, এটির প্রতি আলাদা মমতাও থাকার কথা।

 

কিন্তু এই টি২০ এর যুগে, ওয়ানডেতেও মারকাটারি ক্রিকেটের এই সময়ে উইকেট শিকারি বোলিংয়ের চেয়ে রান বাঁচানোর দিকেই অনেক বোলারের প্রবণতা বেশি। সুইংয়ের শিল্প শেখার ঝোঁক কমছে ক্রমেই। তুলে ধরলেন ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পেসারদের উদাহরণ। একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে এখানেই হতাশার কথা বললেন কাপিল, ‘(এই সময়ের) ফাস্ট বোলারদের নিয়ে আমি খুশি নই। ক্রস সিমে কখনো ফাস্ট বোলিং হয় না। বোলারদের বুঝতে হবে, গতি মূলত ব্যাপার নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো সুইং। তাদের শেখা উচিত। কিন্তু এই শিল্প থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। ওয়াসিম, বোথাম, উইলিস, হ্যাডলি, ম্যাকগ্রার দিকে তাকান, কত ভালো ছিল তারা। সুইং বোলিংয়ের শিল্প ফিরে আসা উচিত। নাকল বল বা অন্যান্য বৈচিত্র্য শেখায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সুইং করাতে না জানলে সবই বৃথা।’

 

এবারের আইপিএলের প্রসঙ্গও টানলেন কপিল। গতিময় ও বৈচিত্র্যের পসরা মেলে ধরা পেসারের কমতি ছিল না এই আসরে। কিন্তু আলোচনায় কম থাকা দুই ভারতীয় পেসারের বোলিং মনে ধরেছে কপিলের, ‘আইপিএলে অনেকে বুঝেছে, গতির চেয়ে সুইং গুরুত্বপূর্ণ। সন্দিপ (শর্মা) ১২০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছে, কিন্তু সামলানো কঠিন ছিল, কারণ সে বল মুভ করিয়েছে। এবার আইপিএলে আমার নায়ক টি নটরাজন। এই তরুণ ভয়ডরহীন এবং অনেক ইয়র্কার করেছে।’

 

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় যা কার্যকর, ভারতে সেটিই উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন কপিল দেব। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের মতে, জাতীয় দলে সংস্করণ ভেদে ভিন্ন অধিনায়কের কৌশল ভারতের সংস্কৃতিতে কাজে দেবে না। জাতীয় দলে নেতৃত্বের ভাগাভাগির দাবি ভারতীয় ক্রিকেটে উচ্চকিত হচ্ছে ক্রমশ। সাদা পোশাকে বিরাট কোহলিকেই রেখে রঙিন পোশাকে রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক চান সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

 

আইপিএলে রোহিতের অসাধারণ সাফল্য ও জাতীয় দলে স্বল্প সুযোগে নেতৃত্বের দারুণ সাফল্যের পাশাপাশি অধিনায়ক কোহলির ট্রফি খরা মিলিয়েই আলোচনা চলছে এটি নিয়ে। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে না হলেও অন্তত টি২০তে রোহিতকে অধিনায়ক দেখতে চাওয়ার লোক এখন কম নেই। তবে সেই দলে নেই কপিল। সাম্প্রতিক এই আলোচিত প্রসঙ্গ নিয়ে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নিজের ভাবনা জানালেন ভারতের ইতিহাসের সফলতম পেসার, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে এটা সেভাবে কাজে দেবে না। একটি কোম্পানিতে কি দুজন প্রধান নির্বাহী থাকতে পারে? কোহলি যদি টি২০ খেলা চালিয়ে যায়, তাহলে সে যথেষ্টই ভালো। তাকে থাকতে দেওয়া হোক। যদিও আমি চাইব অন্যরা এগিয়ে আসুক, কিন্তু কাজটা কঠিন।’

 

রোহিতের নেতৃত্বে আইপিএলে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ৮ মৌসুম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে নেতৃত্ব দিয়ে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি বিরাট কোহলি। এছাড়া জাতীয় দলেও সীমিত ওভারে অধিনায়ক কোহলির নেই ট্রফি। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে খর্বশক্তির দল নিয়েও ২০১৮ নিদাহাস ট্রফি ও এশিয়া কাপে ভারতকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত।

 

এই বিষয়টি প্রসঙ্গে কপিল দেব বলেন, ‘সংস্করণ আলাদা হলেও আমাদের শতকরা ৮০ ভাগ বা ৭০ ভাগ দল ওই একই। আলাদা অধিনায়কের ভিন্ন ভিন্ন তত্ত¡ ক্রিকেটাররা পছন্দ করে না। অধিনায়কের ওপর ভরসা করে, এমন ক্রিকেটাররা বিভ্রান্ত হতে পারে এটাতে। অনেকে মনে করতে পারে, সে আমাদের টেস্ট অধিনায়ক, তাকে বিরক্ত করা যাবে না।’