শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেকে শাণিত করতে চান সুমন

ক্রীড়া ডেস্ক
  ২৮ অক্টোবর ২০২০, ২১:০৪

বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপের ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর থেকেই বেশ আলোচনায় আছেন সুমন খান। ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে তার পদচারণা দুই বছরের। এতটা আলো তার ওপর পড়েনি আগে। তাতে অবশ্য চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে না ডানহাতি এই তরুণ পেসারের। লক্ষ্য তিনি ঠিকই দেখতে পাচ্ছেন। সেই পথে এগিয়ে যেতে নিজেকে আরও ঘষামাজা করতে চান হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডের ক্যাম্পে। তবে প্রেসিডেন্ট’স কাপের ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ একাদশের শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখার পর থেকে দারুণ রোমাঞ্চিত হয়ে আছেন সুমন। এমন ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তিনি।

বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপ খেলারই কথা ছিল না সুমনের। ৪৫ জনের প্রাথমিক দলে জায়গা হয়নি, ছিলেন নাজমুল একাদশের রিজার্ভ বেঞ্চে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ একাদশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ইনজুরিতে পড়ায় সুমনকে ওই দলে সুযোগ করে দেন নির্বাচকরা। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত ২০ বছর বয়সি পেসারের। অথচ আগের চার ম্যাচে মাত্র দুটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন সুমন। উইকেট পেয়েছেন ৫টি। আর ফাইনালেই নিলেন ৫ উইকেট। প্রথম দুই স্পেলে ৬ ওভারে ৩ উইকেট। তৃতীয় ও শেষ স্পেলে নেন আরও ২টি। সবমিলিয়ে ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সব আলো নিজের ওপর কেড়ে নেন ডানহাতি তরুণ এই পেসার।

সুমন নিজেও তৃপ্ত। সংবাদমাধ্যমকে এই পেসার বলেছেন, ‘টুর্নামেন্টটা অনেক ভালো কেটেছে। এখানে সুযোগ ছিল নিজের সেরাটা দেওয়ার। ছোট একটা টুর্নামেন্ট, অল্প সময়ের। চেষ্টা করেছি ভালো করার, আল্লাহর রহমতে ভালো কেটেছে, অনুভূতিটাও অসম্ভব ভালো। আসলে সবার প্রত্যাশা বেড়ে গেছে এখন, আমার দায়িত্বও বেড়ে গেছে। পারফর্ম করাতে সবাই হয়তো ভাবছে সামনে আরও ভালো করতে হবে, তাহলে সুযোগ আসবে। এজন্য আমার নিজের ওপরও দায়িত্ব এসেছে যে এখন ভালো করছি, সামনে আরও ভালো করতে হবে।’

ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিং করা সুমনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লহ। তার কাছে এটা বিশাল প্রাপ্তি, ‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই সবসময় প্রশংসা করেছেন। ম্যাচ শেষে ভালো করার পর তিনি এসে বলতেন, ‘ভালো লাইন-লেন্থে বল করছো।’ এটা আমার জন্য দরকার ছিল, উনিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন, বললেন, ‘ওয়েলডান।’ ম্যাচ শেষে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে যখন হ্যান্ডশেক করছিলাম তখন মুশফিক ভাইও বললেন, ‘খুব ভালো বল হয়েছে, দরকার ছিল এটা তোমার জন্য।’ বড় ভাইদের কাছ থেকে যখন এ রকম কিছু পাওয়া হয়, তখনকার অনুভূতিটা আসলে অন্যরকম।’

২০১৬ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুমন। কিন্তু একবছর যেতেই লেখাপড়ায় বিরক্তি চলে আসে তার। ক্রিকেটপ্রেমে হাবুডুবু খাওয়া সুমন এক বন্ধুর পরামর্শে ভর্তি হয়ে যান বিকেএসপিতে ডিগ্রিতে। কারণ ওখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলা যাবে। তবে এমন ভাবনা সহজ ছিল না সুমনের জন্য। বাবা সুলতান আলী খান চ্যালেঞ্জ দেন তিন বছরের। সেই চ্যালেঞ্জ মাথা পেতে নিয়ে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন লালন করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি, ‘যেদিন নর্থ সাউথ থেকে পড়াশোনা ছেড়ে ক্রিকেটে চলে আসি সেদিন থেকে আমার সব মনোযোগ ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়েই এগিয়ে যাব, আশা আছে একদিন শীর্ষ পর্যায়ে খেলতে পারব।’

তিন দলের ওয়ানডে টুর্নামেন্ট মাতানো সুমন হাই পারফরম্যান্স ইউনিটেও আছেন। এই ক্যাম্প থেকে নিজের স্কিলের উন্নতি করতে মুখিয়ে তিনি, ‘এইচপি একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম, বিশেষ করে আমার জন্য দারুণ সুযোগ। কেননা আমি কোনো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলিনি। আল্লাহর অশেষ রহমত বিসিবি একটা সুযোগ করে দিয়েছে, এখানে থেকে নিজেকে প্রস্তুত এবং নিজের স্কিল উন্নতি, ফিটনেস উন্নতি করার জন্য। সে ক্ষেত্রে বলব এইচপি একটা ভালো জায়গা নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম মাধ্যম।’

সুমন আরও বলেছেন, ‘এইচপি তরুণ বা ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়দের ওপরে ওঠার একটি ধাপ। জাতীয় দলে যাওয়ার আগে এখান থেকে পারফরম্যান্স, মানসিকতা বা ট্যাকটিক্যালি নিজেকে প্রস্তুত করা যায়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় দলে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে খেলোয়াড় গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে