রাখাইনের জন্য করিডোর নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রশ্ন

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৩ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৪

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দিতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। 

এতে দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি বলে মত দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে গণসংযোগের সময় বলেছেন, এই করিডোরের কারণে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। 

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, নিরাপত্তার বিষয় জড়িত থাকায় করিডোরের প্রসঙ্গটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। নবগঠিত এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ সমকালকে বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত হতে হবে।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গত মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের পর রাখাইন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড থেকে সেখানে যোগাযোগের পথ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। ফলে জরুরি সহায়তা পাঠাতে এই করিডোর চায় তারা। গত ৮ এপ্রিল এ তথ্য জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল সোমবার সমকালে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গতকাল সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার এককভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ  সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। এটি অনেক বড় সিদ্ধান্ত। তাদের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। কারণ এর সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা-স্থিতিশীলতা জড়িত। 

মির্জা ফখরুল বলেন, গাজায় সহায়তা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে মানবিক প্যাসেজ তৈরি করা হয়েছে। মানবিকতা থাকা ভালো। কিন্তু আজ বাংলাদেশকে ওই জায়গায় পৌঁছাতে হলো যে, আরেকটি দেশকে প্যাসেজ দিতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘গাজায় পরিণত হতে চাই না, আমরা আরেকটা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। বাংলাদেশে এসে কেউ গোলমাল করুক এটিও চাই না। একে তো আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমস্যায় আছি, তার ওপর প্যাসেজ দেওয়া নিয়ে যাতে সমস্যার সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল।’

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জামায়াত আমির লেখেন, রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ, এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তা বিষয় জড়িত থাকতে পারে। 

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ সমকালকে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের একটি আকাঙ্ক্ষা হলো পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কোনো সরকার চাইলেই নিজেদের মতো করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক দল ও জনমতের প্রতিফলন ঘটে এমন সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রোহিঙ্গা রাষ্ট্র নিয়ে জামায়াতের ব্যাখ্যা 

গত রোববার বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে পৃথক দেশ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। 

রোববার তিনি বলেছিলেন, জামায়াত আরাকানে রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা বলেছেন, জামায়াতের প্রস্তাবের বিষয়ে তারা বেইজিং গিয়ে সরকারকে জানাবে।

তবে গতকাল এ অবস্থান পাল্টে ডা. তাহের বলেছেন, ‘মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি। এটিই জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি।’