বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ও কুলাউড়ার কৃতি সন্তান ডা: শফিকুর রহমান বলেন, জন্মস্থানের একটা মায়া, একটা ভালোবাসা আছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আপনাদের সামনে ২৪ বছর কথা বলার সুযোগ পাইনি। কুলাউড়ার মানুষ আমাকে যেভাবে চিনে, অন্য কেউ সেভাবে চিনে না। আমি কি যুদ্ধাপরাধী? না, অথচ আমার উপর যুদ্ধপরাধের মামলা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিলো মাত্র সাড়ে ১২ বছর। সাড়ে ১২ বছরের মানুষ যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষ খুন করতে পারে- এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা? চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি। এমনকি হিন্দু ভাইয়েরাও তাতে রাজি হয়নি।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫ টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো মাঠে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
আমির বলেন, আমি সেই সময় জামায়াতে ইসলাম করতাম না। আমি অন্য একটা সংগঠন করতাম। যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়। বিগত জালিম সরকারের আমলে আমরা ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হারিয়েছি। আমাদের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক হামলা-মামলার শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাতেও কান্ত না হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের নিবন্ধন বাতিল করেছিল। এরপর ২৪ সালের আগষ্টের ১ তারিখ আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শুধু আল্লাহকে বলেছিলাম, ৪দিন পর আল্লাহর বিচার হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের সাথে আমরাও ছিলাম। জালিমের মাথা আল্লাহ গুড়িয়ে দিয়েছেন।
২৬ হাজার কোটি টাকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতারা পাচার করেছে। প্রশাসন কত টাকা পাচার করেছে আল্লাহই ভালো জানেন। তাদের ভাব ছিলো এমন- তারা রাজা আর আমরা প্রজা। ওই সরকার কারো সাথে ভালো আচরণ করেনি। ৭ বছরের শিশুও আন্দোলন করেছে। এক মা দুধের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে সংহতি প্রকাশ করার জন্য আন্দোলনে নেমেছিলেন। এটা ছিলো জুলাই বিপ্লব।
আমি প্রত্যেকটা শহীদের বাড়িতে যদি যেতে পারতাম। তাদের সন্তান কুলে নিতে পারতাম। তাহলে নিজেকে শান্তনা দিতে পারতাম। এরপরও যাদের বাড়ি গিয়েছিলাম তাদের জিজ্ঞেস করেছি কেমন আছেন, তারা শুধু টপটপ করে চোখের পানি ফেলেছেন। জানতে চেয়েছিলাম-কি চান? তারা বলেছিলেন, জালিমের হাতে দেশটা যেন আর না যায়। দেশটা আপনাদের হাতে দেখতে চাই। এমন একটা দেশ দেখতে চাই চাদাবাজ, ঘোষখোর ও সুদখোরদের ঠাঁই হবে না। আপনাদের চাওয়াই কি এক? যদি এক হয়, তাহলে লড়াই আমাদের শেষ না, লড়াই শুরু। এই লড়াই চলবে। যতদিন এই দেশে আল্লাহর আইন, মানবতার আইন, মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত না হয়।
বাংলাদেশকে আল্লাহ জালিমের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনকেও যেন আল্লাহ জালিমের হামলা থেকে মুক্ত করে দেন।
আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে হিন্দু মুসলিম কিংবা মেজরিটি মাইনরিট বলে কিছু থাকবে না। দু:শাসন এবং জুলুমের কারণে আপনাদের মুখ দেখতে পারিনি। আজ প্রাণখোলে দেখতে চাই।
কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সিলেট মহানগরীর আমির মো: ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রিয় মজলিসে সুরা ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো: ইয়ামির আলী, মৌলভীবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা আমির সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ঢাকা পল্টনের আমির শাহিন আহমদ খান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, খেলাফত মজলিসের জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা আলতাফুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির খন্দকার আব্দুস সোবহান, আব্দুল বারী মাস্টার ও আব্দুল হামিদ খান, মৌলভীবাজারের পৌর আমির হাফিজ তাজুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলা আমির মো: আবু রাইয়ান শাহিন, জুড়ী উপজেলা আমির আব্দুল হাই হেলাল, বড়লেখা উপজেলা আমির মো: এমদাদুল ইসলাম।
যাযাদি/ এমএস