বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে। দেশে পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হবে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের একটি কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য (রুকন) শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম বলেন, কারো চোখ রাঙানিকে আমরা ভয় করি না। বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায় আরও যত রক্ত দেয়া প্রয়োজন দিতে আমরা রাজি আছি। আগামী বিপ্লব চট্টগ্রাম থেকে শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে আমাদের থাকতে হবে। এই ঐক্যকে অটুট রাখতে হবে। এই ঐক্যকে নস্যাৎ করতে পারে এই রকমের কোনো অপশক্তিকে আমরা কোনো অবস্থায়ই বরদাশত করবো না। এ অবস্থায় সচেতন রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যদের তুলনায় জামায়াত ইসলামীর দায় অনেক বেশি।
এটিএম মাসুম বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেনি। তারা ভিন্ন রাষ্ট্রের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করেনি। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর আলেম-ওলামাদের জেল-জুলুম দিয়ে নির্যাতন করেছে। ইসলাম তাদের কাছে সহ্য হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসলামের গন্ধ যেখানেই ছিল সেখানেই তারা পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি খুনের বিচার করতে হবে। আসামির কাটগড়ায় তাদের দাঁড়াতে হবে। কোনোভাবে বাংলাদেশকে হায়নার হাতে তুলে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, সমাজের প্রতিটি সেক্টরে যোগ্য, দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রত্যেককে তৈরি হতে হবে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে শুরু করতে হবে। দাওয়াতের পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর সংস্কার প্রস্তাবকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তাদের কাছে এই প্রস্তাব সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সকল ওলামায়ে কেরামগণসহ ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম বলেন, জামায়াতে ইসলামী জন্মলগ্ন থেকে বহু ঘাত প্রতিঘাত মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব এবং রাসূলের আনুগত্যের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা করে আসছে। মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান আহ্বান পৌঁছিয়ে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত তৈরির কাজ করছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসনাত মো. আব্দুল হালিম বলেন, যারা ঈমানদার তারা আল্লাহকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। দ্বীনের জন্য তারা ফাঁসি বরণ করতেও ভয় পায় না। আল্লাহকে ভালোবেসে তা মনে ধারণ করায় হলো তাকওয়া। তাকওয়ার চেতনায় আমাদেরকে কাজ করে দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কুরআন—সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে হকের ওপর অটল থেকে আল্লাহর ভয়ে জীবনের প্রত্যেকটি কাজ করতে হবে এবং যার যে দায়িত্ব আছে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সৎ লোক তৈরি করে এটি বর্তমান প্রশাসন বিশ্বাস করে। তারা এটাও বিশ্বাস করে আমাদের সংগঠন নীতির কথা বলে ও নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল এখন তারা পালিয়েছে অথচ জামায়াতে ইসলামী বর্তমানে সর্বত্র বিরাজমান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা নবী ও রাসূলদের মাধ্যমে আমাদের নৈতিক শিক্ষা দিয়েছেন এবং সত্যের সাক্ষ্যদাতা বানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী সেরকমই সত্যের সাক্ষ্য দেয়ার দল। সৌহাদ্য-সম্প্রীতির মাধ্যমে সোনালী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দ্বীনের প্রয়োজনে রাজনীতি, রাজনীতির প্রয়োজনে দ্বীনকে গ্রহণ করা যাবে না। আনুগত্য, পরামর্শ, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, এহতেসাব ও আনুগত্যের মাধ্যমে সংগঠনের মজবুতি ভিত্তি তৈরি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, নগর জামায়াতের আমির, সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতে ইসলামী অবরুদ্ধ ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।
নগর জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় সদস্য (রুকন) শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসনাত মো. আব্দুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। দারসুল কোরআন পেশ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ।
উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও নগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. ছিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজুর রহমান, আমির হোসাইন, হামেদ হাসান এলাহী প্রমুখ।
যাযাদি/ এম