সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯
শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই এক যুগ পর বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দিন পর রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। ছিল উচ্ছ্বাস-আবেগ।
বিএনপি প্রধানের আগমনে অনেককেই আপ্লুত করেছে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন সশস্ত্রবাহিনী দিবসের সংর্বধনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার সঙ্গে পাশাপাশি চেয়ারে বসে কুশল বিনিময় করেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. ইউনূস তার বক্তৃতার শুরুতেই বেগম জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে।’
ড. ইউনূস বেগম জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’ খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বেগম জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে তার নির্ধারিত চেয়ারে বসার পর তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন আগত অতিথিরা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তার আসনে বসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন।
এ সময় সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানানো হয়েছে তাতে গোটা জাতি আনন্দিত।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য। তাকে ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী থেকে দূরে করে রাখা হয়েছিল। আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এবং বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যে আজ ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, তাতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি, একই সঙ্গে গোট জাতি আজকে আনন্দিত হয়েছে।
এর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন বলে জানান প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার। ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এ সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে ছিলেন।
সেনাকুঞ্জের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মহাসচিব ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণপত্র জানানো হয়।
যাযাদি/ এস