হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলেই মনে করেন ডা. শফিকুর রহমান
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭
শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলেই মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমি বলছিলাম এটা বার বার বলা দরকার নাই। মানুষ তো জানে এরা ফ্যাসিবাদী।
তারপরও দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে অন্যটা। বলে, এদের ফ্যাসিবাদ যাতে মানুষ ভুলে না যায় তাই বলতে হবে বার বার। আমার এখানে কোনো ডিফারেন্স নাই।
সম্প্রতি লন্ডনে বাংলা আউটলুককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের।
জুলকারনাইন সায়ের : আপনাকে ধন্যবাদ বাংলা আউটলুকের সঙ্গে কথা বলার জন্য। প্রথম প্রশ্ন, ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান, এই অভ্যুত্থানের আগের বাংলাদেশ, আর পরের বাংলাদেশ, এই দুই বাংলাদেশের মধ্যে রাজনীতি কি একই ধারায় চলবে পারবে? এবং যদি না হয় তাহলে মৌলিক কী কী পার্থক্য আসতে পারে বা আসা প্রয়োজন?
শফিকুর রহমান: ধন্যবাদ আপনাকে এই মূল্যবান প্রশ্নটা করার জন্য। বাংলাদেশ বাংলাদেশের জায়গায়ই আছে। আমরা জায়গা শিফট করেছি। তবে হ্যাঁ, এই পলিটিক্যাল চাপটার শিফট হওয়ার কারণে গুণগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। তার বড় প্রমাণ আজকে আপনার-আমার এই সাক্ষাৎকার। আমি আজ থেকে চার মাস আগে এটা কল্পনাও করতে পারিনি।
সম্ভবত আপনিও চিন্তা করেননি। এখানে একটা কথা, যেটা আমরা দেখছি, সেটা হলো ফ্রিডম অব প্রেস, এখন মিডিয়াগুলো সব জায়গায় যেতে পারছে। কথা বলছে পারছে, বলাতে পারছে, তারা শোনার সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। আপনি জানেন, আমরা দলগতভাবে সাড়ে ১৫ বছর খুবই নির্যাতিত ছিলাম। আমাদের নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। জুডিসিয়াল কিলিং। এটা নিয়ে আপনারা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিতে কাজ করেন, তারা তাদের কনসাল রেস করেছেন। প্রটেস্ট করেছেন, অনেক কিছু রিকমেন্ট করেছেন, কিন্তু সরকার কিছু কানে নেয়নি। এ ক্ষেত্রে শুধু আমরা না, আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করার পাশাপাশি প্রায় সকল বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সবাই নির্যাতিত। আলেম-ওলামা নির্যাতিত। এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্যাতিত। আমি বলি যে, ভিক্ষুকও নির্যাতিত। ওদেরও ভিক্ষা করার জন্য চাঁদা দিয়ে বসতে হতো।
আবার সিন্ডিকেশনের জন্য সারাদিন কষ্ট করে যেটুকু ভিক্ষা পেত, কিছু কিনতে গেলে তাদের নাভিশ্বাস হতো। জিনিসপত্রের দাম সিন্ডিকেশন করে বাড়িয়ে দেওয়া হতো, যখন যা ইচ্ছা, অসহায় জনগণের কিছু বলারও ছিল না, আমরা কিছু বলতে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলার পারদ, জেল-নির্যাতনের পারদ চলে আসত। স্টিল আমার চেষ্টা করেছি, আমাদের সংগত অবস্থান থেকে। এই যে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ, ধর্ম-বর্ণের মানুষ নির্যাতিত হলো, এই নির্যাতনের কারণেই মানুষের মাঝে বড় ধরনের একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। সব চেয়ে বড় সমস্যা ছিল যে, মানুষ তার কষ্টের কথাটা কাউকে বলতে পারত না। একটা ভয়ের সংস্কৃতি সেখানে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এখন মানুষ বলতে পারছে, এখন বলবেন যে, আপনারা বলতে পারছেন, তখন যারা বলতে দেয়নি তারা তো বলতে পারছে না। তারা তো বিভিন্নভাবে বলছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যাওয়ার পরে তিনি তো শান্ত হন নাই। তিনিও তো ঘনঘন তার বার্তা পাঠাচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন, এটা করো, ওইটা করো। এই করবে, এইগুলো তো তিনি কন্টিনিয়াস করেই যাচ্ছেন। সেটা তার ফিডম অব এক্সেপেশন বলতে পারেন। যদিও আনএক্সপেক্টেড, এটা হওয়া উচিত নয়, দিস ইজ ওয়ান থিংক।
দুই নম্বর হলো যে, আগে ঘনঘন মানুষের বিরুদ্ধে যে অ্যাকশন নেওয়া হতো, পুলিশি অ্যাকশন, এই অ্যাকশনটা এখন দৃশ্যমান না। তাহলে বলবেন কি ক্রাইম চলে গেছে? বা যারা কিছুদিন আগে ক্রাইম করলো, মানে গণহত্যা, বিপ্লবে যে গণহত্যা চালালো। তাদের কি পুলিশ ধরবে না? হ্যাঁ, পুলিশ ধরবে, পুলিশ পুলিশের মতো ধরবে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে, মামলা আদালতের আশ্রয়ে দিয়ে দেওয়া। এরপর যারা অপরাধী তাদের আদালতের আওতায় আনা। পুলিশ প্রশাসনের কাজ ধরা, আর বিচার করা জুডিশিয়ালের কাজ। তবে হ্যাঁ, আমরা যেটা লক্ষ করছি, পুলিশের ডিউটি পুলিশ হয়তো ঠিকমতো পালন করছে না। এটার কারণ যা-ই থাকুক না কেন, এটা বাস্তবতা। এ আর একটা শিফট আপনি মনে করতে পারেন।
এরপর দেশের অর্থনীতি যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, ফোকলা করা হয়েছে, বাংক, ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর, সবই তো শেষ করা হয়েছে।
উন্নয়নের বেলুনটা দেখিয়েছে জাতিকে, ভেতর থেকে এই যে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড পাচার করেছে এটা তো জাতি জানে না। এখন জাতি জানতেছে। তখন জানার সুযোগ ছিল না। তবে আন্দাজ করেছে। এখন জানতেছে, একেকজনকে ধরতেছে, দেখা যায় যে কাজের মেয়েও ৪০০ কোটি, ১০০ কোটি টাকার মালিক। কাজের মেয়ে বলে আমি কাউকে হেয় করছি না। কিন্তু এটা তো বিশাল চিন্তার ব্যাপার যে, যার কাজের মেয়ের এই অবস্থা, তার নিজের কী অবস্থা। এগুলো তো মানুষ এখন মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে। এরপরও আমরা দেখলাম যে বটম লাইনে নেমে গেল আমাদের রিজার্ভটা।
যার ফলে আমাদের এক্সপোর্ট-কন্টাক্ট ব্যবস্থা দারুণ চ্যালেঞ্জে পড়ে গেল। এবং সরকারের শেষের দিকে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিশেষ করে প্রবাসে যারা আছেন তারা তাদের আশাও হারিয়ে ফেলল। অতিষ্ঠ হওয়ার কারণে তারা রেমিট্যান্স পাঠায়নি, বন্ধ করে দিল। এখন আলহামদুলিল্লাহ, ওই সরকারের আমলে যে রিজার্ভ মেনে গেছিল, সেটা স্বাভাবিক হচ্ছে। ইভেন এই সয়মের মধ্যে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে রিজার্ভে হাত না দিয়েই। এটা বিশাল অর্জন। মাত্র তিন মাস সময়ের ব্যবধানে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা যে বলছিলেন, ৫ লাখ মানুষ মারা যাবে। তারা দায়িত্বহীন, বিবেকহীন হলেও দেশের মানুষ কিন্তু দায়িত্ব, বিবেক সম্পূর্ণ।
দুই দিনে তিনজন মারা গেছেন। যে তিনজনকে মারা হয়েছে, তাও দেখা গেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটাকে মারা হয়েছে, যে ছয়জন এর সাথে জড়িত, কয়েকজন ছাত্রলীগের।
আমরা কিন্তু কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতিতে যাব না ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। এর অর্থ এই যে আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। কিন্তু অবশ্যই যাদের খুন করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে, বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, তারা মামলা করবে। এখানে আমাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নাই। ছবি : বাংলা আউটলুক
এতবড় পরাজয়ের পরও তাদের নেশা কাটেনি মানুষকে খুন করার। মানুষকে খাওয়ালো, বসালো, এরপর হাসতে হাসতে তাকে পিটিয়ে মারল। এটাই তো করেছে সারা বছর। মানুষ মেরেছে, গুম করেছে, আয়নাঘরে নিয়েছে, তারপর তারা বেঁচে আছে কি নাই দেখল না। এখন পর্যন্ত সেই অনিশ্চয়তা কাটে নাই মানুষের। এই সংস্কৃতিটা বন্ধ হয়েছে। এখন কাউকে আয়নাঘরে নেওয়ার খবর আমাদের নাই। কেউ এখন বলছে না যে আমাদের অমুক আত্মীয়টাকে ধরে নিয়ে গেছে, আমরা এক মাস দুই মাস হয়ে গেল তার কোনো খবর পাচ্ছি না। এটা আমরা দেখতি পারছি না। কিন্তু আগে পত্রিকাকে যতই কঠিনভাবে কন্ট্রোল করুক, তারপরও দু-একটা নিউজ বের হয়ে আসত। আপনারা যেটা সাহস করে করেছেন, সেই আমলেই তো করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। এইগুলো আপনি বলতে পারেন যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
আর পরিবর্তন আমরা যেটা লক্ষ্য করছি, দেশের মানুষ, কিছু কিছু বিষয়ে কথা বলত, প্রথমে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে আমরা কাউকে কিছু করতে দেব না। এছাড়াও আলহামদুলিল্লাহ, কেউ আর এটা বলে না, ভাই, বড় ভয়ে আছি। হ্যাঁ, একদল মানুষ সাড়ে ১৫ বছর সীমাহীন অপকর্ম করেছে। তাদের তো কর্মফল পেতে হবে।
খুব কমই তারা ইতিমধ্যে অ্যারেস্ট হয়েছে। বাকি অ্যারেস্ট হবে তো?
এখানে একটা কথা বলে রাখতে চাই। আমরা কিন্তু কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতিতে যাব না ঘোষণা দিয়ে দিয়েছি। এর অর্থ এই যে আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। কিন্তু অবশ্যই যাদের খুন করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে, বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, তারা মামলা করবে। এখানে আমাদের কোনো কম্প্রোমাইজ নাই। যে মানুষই হোক, আমাদের দলের হোক আর সাধারণ হোক, যে-ই আমাদের সার্পোট চাইবে আমরা তাকে সার্পোট দেব। কারণ আমরা চাই বিচারহীনতা দূর হোক এবং অবিচার দূর হোক। আবার এটাও আমাদের দাবি, আমাদের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, যে মব জাস্টিস বলেন আর ক্যাঙারু কোর্টে মিস ক্যারেজ অব জাস্টিস বলেন, আমরা চাই যে, যে-ই ভুলটা করেছে বা ক্রাইম করেছে সে যেন সেই ক্রাইমের উপযুক্ত শাস্তি পায়। এর বেশি না।
জুলকারনাইন সায়ের : আপনি বললেন যে, আপনার দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী গুম হয়েছে, হত্যার মতো অপরাধের শিকার হয়েছে, আপনার দলের অনেক নেতা ভুল বিচারের সমক্ষীন হয়েছেন। তাদের ক্যাঙারু কোর্টে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তো আপনারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কি দলীয়ভাবে এসবের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন?
শফিকুর রহমান: দলের ব্যাপারে যেগুলো আছে, সেগুলো তো আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবোই। যেমন আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন এটা উঠে গেছে। নিবন্ধন আমাদের বাতিল করা হয়েছে, আমরা দলীয়ভাবে এগুচ্ছি। এটা দলীয় ব্যাপার। কিন্তু খুন এবং গুম যেটা হয়, সব দেশের বিদ্যমান আইনে ভিক্টিমের ফ্যামিলি এটার প্রতিকার চাওয়ার দাবিদার। আমরা কাউকে নিষেধ করছি না, আবার কাউকে উসকানিও দিচ্ছি না, কিন্তু নিজেই স্পটে যারা এগিয়ে আসছে, আমরা তাদের সাথে আছি।
জুলকারনাইন সায়ের : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে একটি ধারণা এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, দ্য হিন্দু নামক পত্রিকাকে, এসব বিষয়ে আসলে রাজনৈতিক শক্তিরা যারা আছেন, যেমন বিএনপি, তাদেরও হয়তো একটা ডিসিশন থাকতে পারে। জামায়াতের এই বিষয়ে কী মনোভাব?
শফিকুর রহমান : দেখেন, এখানে জামায়াতের মনোভাব বড় না। তারা তো শুধু জামায়াতের মানুষকে খুন করে নাই। তারা তো গোটা জাতিকে খুন করেছে। সংখ্যা যেটাই হোক। বাছবিচার তো করেনি, বিশেষ করে ২৪-এ অভ্যুত্থান হয়েছে, বিপ্লব হয়েছে, যে নামেই বলেন। এখানে তো সাধারণ মানুষ মরেছে। এখানে কোনো দল ছিল না, মত ছিল না। সকল মানুষ মরেছে। এবং এখানে মুসলমানরা যেমন মারা গেছে পুলিশের হাতে, গুন্ডাদের হাতে, আমরা গুন্ডা বলবো না, পুলিশ এবং দলীয় সন্ত্রাসী, তাদের হাতে যেমন মুসলমানরাও মারা গেছে, হিন্দুরাও মারা গেছে। এখানে কোনো ধর্মীয় ব্যাপার ছিল না। দলীয় ব্যাপারও ছিল না। ব্যাপারটা ছিল সামগ্রিকভাবে জনতার। সেই জনতার এখন পর্যন্ত কান্না থামেনি। যারা আপনজন হারিয়েছে। পঙ্গুরা এখনও হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, যারা প্যারালাইজড হয়েছে তারা উঠতে পারতেছে না। এই ট্রমা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আছে। এই সময় বাংলাদেশের মানুষ ডিসিশন নেবে আওয়ামী লীগকে তারা কীভাবে দেখতে চায়। নম্বর ওয়ান।
আওয়ামী লীগ কেন ইলেকশনে আসবে? তারা কি ইলেকশন চায়? তাদের ২০১৪-এর ইলেকশনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, তাদের বিরুদ্ধে একজন মানুষও দাঁড়ায়নি। তার মানে হলো ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পাগল বানিয়ে রাখছিল, যাতে মানুষ ইলেকশনে না আসে। ছবি: বাংলা আউটলুক
নম্বর টু, আওয়ামী লীগ কেন ইলেকশনে আসবে? তারা কি ইলেকশন চায়? তাদের ২০১৪-এর ইলেকশনে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, তাদের বিরুদ্ধে একজন মানুষও দাঁড়ায়নি। তার মানে হলো ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পাগল বানিয়ে রাখছিল, যাতে মানুষ ইলেকশনে না আসে। অর্ধেকের বেশি আসন তো তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেল। এরপর আর এই সংসদের ভ্যালু কী থাকে? এবং ২০১৮ সালে মিডিয়া তুলে এনেছিল, বহু সেন্টারে একটা মানুষও যায়নি। একটা ভোটও পড়েনি। কুকুর ঘুমাচ্ছে শান্তিতে, মানুষ নাই। সেই দৃশ্য ছিল।
সবকিছু তাদের হাতে, প্রশাসন তাদের কথায় উঠবস করত। ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারে নাই। ২৯ তারিখ রাতেই নির্বাচন শেষ করে ফেলেছে। তারা কি ইলেকশন চায়? তারা কি ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করে?
এরপর ২৪-এ এসে তো সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে, কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখেনি। সেখানে কোনো দল যাওয়ার আর পরিবেশ ছিল না। যার কারণে আগেরটা হলো মিডনাইট ইলেকশন, পরের হলো ডামি ইলেকশন। এই ডামি ইলেকশনে এমপিরা ডামি, মন্ত্রী সভাও ডামি। ডামি দিয়ে তারা চালাইলো। এই রকম যার ক্যারেক্টার, তাকে ইলেকশনে আনবেন—এটা তার ওপর জুলুম হয় না? সে তো ইলেকশন চাইতেছে না।
জুলকারনাইন সায়ের : পরবর্তী প্রশ্ন, আপনারা কি অন্য কোনো ইসলামিক পার্টিকে আপনাদের অ্যালায়েন্স হিসেবে যুক্ত করার কোনো পরিকল্পনা রাখেন? আর যদি রাখেন, তাহলে তাদের যে মনোভাব, তাদের যে রাজনৈতিক আইডোলজি, সেটা কি আপনাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না?
শফিকুর রহমান : ইসলামিক দলের সঙ্গে তো কোনো আদর্শগত দ্বন্দ্ব নাই। এখন কথা হলো আমরা কোনো অ্যালায়েন্স করবো কি না…ইলেকশন আমাদের দেশে তিন রকমের হয়, কোনো দল এককভাবে, কোনো দল বোঝাপড়ায়, সমঝোতার ভিত্তিতে আবার কেউ অ্যালাইন্স করে। আমাদের তিনটারই অভিজ্ঞতা আছে। এখন আমরা যেটা চাচ্ছি একটা ফেয়ার ইলেকশন। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, সমতল মাঠ, সবার জন্য সমান। কেউ যেন কোনো ভয়ভীতি, আশঙ্কা, চাপে না থাকে। এগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে ইলেকশন করতে পারে।
দুই নম্বর হচ্ছে সেই ইলেকশনে, ইলেকশন আসলে কলারাইজেশন হয়। আমরা সেই বিষয়টা এইভাবে নিচ্ছি যে যাদের ইমেজ ক্লিন, যারা রিয়েল পেট্রিয়ট আমাদের দৃষ্টিতে। তাদের সঙ্গে হয়তো আমরা আলাপ-আলোচনা করব যে সবাই মিলে দেশটাকে কীভাবে সুন্দরা করা যায়। শুধু আমাদের চিন্তা না, ওনাদেরও আমাদের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। তাদের কাছে আমরা সেই রকম কিনা। আমরা তাদের যেভাবে পজিটিভলি দেখছি তারা আমাদের সেইভাবে পজিটিভলি দেখছে কিনা। সেখানে অনেকগুলো যোগ-বিয়োগের ব্যাপার আছে। তাছাড়া এখনো তো ইলেকশন কমিশন গঠন হয়নি। ইলেকশন কমিশন গঠন না হলে নির্বাচনের প্রসেস শুরু হবে কীভাবে? এর প্রথম প্রসেস হবে, যে সমস্ত লোক এখনো ভোটার হয়নি অথচ ভোটার হওয়ার বয়স হয়েছে তাদেরটা আপডেট করা। ভোটার লিস্ট আপডেট করা। দেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের ব্যাপারটা ইনক্লুসিভ করা। এখন তো বিদেশে থেকে আমাদের দেশে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা সেইভাবে ওপেন করতে পারেনি। আবার কিছু সমস্যা আছে, আমাদের দেশের নাগরিক ছিলেন, এখন তারা অন্য কোনো দেশের নাগরিক হয়ে গেছেন, তাদের ভোটের ব্যাপারটাও সলিউশন করতে হয়। কারণ তাদেরও কন্ট্রিবিউশন আছে দেশ গড়ার জন্য। তারাও তো হাত বাড়িয়ে দেশকে সহযোগিতা করছে। তাদের জায়গাটা কীভাবে তৈরি করা হবে সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। এসব বিষয় সলভ করে তারপর একটা ক্রেডিবল ইলেকশন হতে পারে। এবং আমরা সংস্কারের জন্য মাত্র ১০ দফা দিয়েছি। কেউ ৩১ এবং ৫৮ দফা দিয়েছে।
আমাদের ৪১টা দফা আছে, কিন্তু আমরা মনে করি ১০ দফা এই সরকারের জন্য যথেষ্ট। আর বাকিটা পরবর্তীতে যারা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট আসবে, আমরা তাদের কাছে এটা উপস্থাপন করব। তারা যাতে এগুলো ফলো করে। ফলো করা না করা তাদের ব্যাপার। আমাদের দাবি আমরা তুলে ধরব।
জুলকারনাইন সায়ের: শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ভোট হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল জিতেছে। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? এ বিষয়টা বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে শঙ্কার কোনো কারণ হতে পারে কিনা।
শফিকুর রহমান : আমি মনে করি আমেরিকা অন্যান্য দেশের মতো আমাদের একটি বন্ধু দেশ। আমেরিকার গণতন্ত্রের একটি ঐহিত্য আছে। বাংলাদেশের গত সাড়ে ১৫ বছরের গণতন্ত্র নিয়ে তারা হ্যাপি ছিল না। তারা বিভিন্ন সময় তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কিন্তু সরকার এগুলো কানে তোলে নাই। বরং আমেরিকা নিয়ে নানা উপহাস করেছে। সেটা আমেরিকা আর আওয়ামী লীগ গভর্নমেন্টের ব্যাপার। আমেরিকা সারা দুনিয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখে। একাট দেশে আমেরিকা চাইবে স্বাভাবিকভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। তাদের বন্ধুটা ভালো থাকুক। আমেরিকার কাছে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি, সব দেশের সরকারের কাছে, পার্টিকুলার কোনো দলের সাথে কারও কোনো সম্পর্ক হবে না। সম্পর্ক হবে সরকার টু সরকার, সম্পর্ক হবে জনগণের সাথে জনগণের। সম্পর্ক হবে জনগণের সাথে সরকারের। এবং আমরা আশা করতে চাই, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হওয়ার পর আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এবং আমরা এটাই আশা করি, সব জায়গায় তিনি গণতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। যখন থেকে তিনি তার অফিসে বসবেন। আমরা সেভাবেই আশা করছি তাদেরকে দেখব। এবং বাংলাদেশের জনগণ তাদের নিজস্ব ব্যাপার ডিসাইড করবে, এটাই সব স্বাধীন দেশের জন্য সম্মানজনক। অন্য দেশ আমাদের ব্যাপারে ডিসাইড করবে, এটা তো কেউ পছন্দ করে না। সে যেই দেশই হোক। বাট অন্য কোনো দেশ বন্ধু হয়ে আমাদেরকে মিউচুয়াল রেসপেক্টের ভিত্তিতে কো-অপারেশন করবে এট তো আমরা সবাই আশা করি। সারা দুনিয়া মিলে তো এখন একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা সেই ভিলেজের একটা বাড়ি।
জুলকারনাইন সায়ের : বাংলাদেশে এখনো চীনের বেশ বড় বড় বিনিয়োগ রয়েছে। চীনের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সম্ভবত বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে ওদের সঙ্গে ঠিক কেমন সম্পর্ক হতে পারে?
শফিকুর রহমান : আমাদের দেশে চীনের যে অবস্থান দেখছি সেটি পার্টিকুলার নয়, সেটি হলো বাণিজ্যিক। বাণিজ্যিক তাদের একটা বড় অবদান বা অংশগ্রহণ আমাদের দেশে রয়েছ। এক্সাম্পল, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট পদ্ম ব্রিজ। সেটা তো তাদের প্রযুক্তি এবং অংশীদারিত্বে করা। এমন আরও অনেক প্রজেক্ট তাদের আছে। তাদের প্রজেক্টগুলো সিকিউরিটির ব্যাপারে এবং এখানে ফান্ড রিয়েলাইজেশনের যে বিষয় রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে তারা সিনসিয়ার। এটা তো যেকোনো দেশ যদি ইনভেস্ট করে তাহলে তো সে সিনসিয়ার থাকবেই। আমরা মনে করি চীনের সম্পর্ক কোনো পার্টিকুলার দলের সঙ্গে থাকবে না। আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তাই আওয়ামী লীগের সাথে ছিল। মানুষ হয়তো মনে করেছে, এটা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক। এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নাই, তারা তো বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এবং তারাই প্রথম দেশ এই ঘটনার পর বাংলাদেশে মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে। তারা বেশকিছু দিন থেকে এখানে আহতদের চিকিৎসা দিয়ে গেছে। ফলে আমরা মনি করি সম্পর্ক আগে যেমন ছিল, এখনো তেমন আছে।
জুলকারনাইন সায়ের : পাশের দেশ ভারত, ভারতের সব সময় একটা নেতিবাচক মনোভব আমরা দেখেছি, জামায়াত ইসলাম বা ইসলামভিত্তিক দলগুলোর প্রতি। এটা বেশ স্পষ্ট যে এই বিষটাতে তারা সব সময় ইতস্ততবোধ করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এক রকম ছিল, এখন সম্পর্ক অবশ্যই তেমন ইতিবাচক নয়। এই পরিবর্তিত অবস্থায়, আপনার কী মনে হয়, সম্পর্ক কোন দিকে যেতে পারে। এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন কীসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের হওয়া উচিত? সম্পর্ক আসলে কেমন হওয়া উচিত?
শফিকুর রহমান : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক অব্যাহত রাখবেন। আমরা তাদের এই কথাটাকে সম্মান করতে চাই। আপনি বলেছেন ইসলামি দলগুলো, পার্টিকুলারলি জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ভারতের রিজারভেশন কাজ করে। আমরা জানি না কেন এই রিজারভেশন কাজ করে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আমরা যেমন আশা করি প্রতিবেশীর সহযোগিতা, তারাও তো আশা করবে তাদের প্রতিবেশীর সহযোগিতা। আমরা সব সময় যে কথাটা বলে আসছি, মানুষ তার পোশাক বদলাইতে পারে কিন্তু প্রতিবেশী তো বদলাতে পারে না।। প্রতিবেশী তো প্রতিবেশীর জায়গায় থাকবে। তো প্রতিবেশী যদি কমফোর্ট জোনে থাকে আমরাও কমফোর্ট জোনে থাকব। মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং রেসপনসিবিলিটির ভিত্তিতে, ইকুইলিটির ভিত্তিতে চমৎকার সম্পর্ক তাদের সঙ্গে মেইনটেইন করা উচিত।
আমাদের কোনো সমস্যা নাই। ভারত বলতে পারবে, আমাদের সাথে তাদের কী সমস্যা। আমরা তাদের ব্যাপানো কোনো হস্তক্ষেপ করি না। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলি না। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত ঠিক করবে তারা কীভাবে চলবে। আমরা বলি, এখান থেকে বলা উচিত মনে করি না।
আমরা সেটা ভারতের কাছেও আশা করি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত সেইভাবে ইনগেজড হবে না। যদিও অতীতের কিছু অভিজ্ঞা এই দেশের মানুষের আছে। কিন্তু মানুষ তো পরিবর্তন হয়, দেশেরও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় সময়ের সাথে সংগতি রেখে। আমরা তাদের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করি এবং আমাদের দিক থেকে কোনো রিজারভেশন নাই।
জুলকারনাইন সায়ের : আমার একটা বেশ কৌতূহলী প্রশ্ন, সেটা হচ্ছে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রায়ই দেখা যায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই প্রশ্ন হয় যে, জামায়াতে ইসলামীর আমির শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট কেন বলেন না? আপনি কি শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বলে মনে করেন না?
শফিকুর রহমান : আমি বলি এবং মনে করি। কিন্তু আমি বলছি, খুব বেশি বললে সুয়াব হইলে আরও বেশি বলব। কালকে এখানে একটা প্রোগাম ছিল, আমি সেখানে বলেছি, যে বিষয়টি সত্য সেটি বার বার বলার দরকার পড়ে না। সত্য যেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, এটার পক্ষে আর বেশি সাক্ষীর দরকার পড়ে না। কিন্তু মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করতে হলে শতবার বলতে হয়। এটা তো সত্য। মানুষ তো চোখের সামনে তাদের ফ্যাসিজম দেখেছে। এবং তাদের সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাসী মানে এটা ফ্যাসিস্ট। তারা আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। তারা বলেছে না, এই আন্দোলন দমানোর সময়, এদেরকে ঠিক করার জন্য ছাত্রলীগ যথেষ্ট? এবং আমরা ছাত্রলীগকেই দায়িত্ব দেব? সেই উসকানি খেয়েই তো ছাত্রলীগ ঢুকে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর পাগলরা ঢুকে পিটাল ছেলেদেরকে। পিটাইছে মেয়েদেরকে। এদের তো হুঁশও ঠিক নাই। তো সেই রকম একটা দলকে আপনি কী বলবেন ফ্যাসিবাদী ছাড়া? আমি বলছিলাম এটা বার বার বলা দরকার নাই। মানুষ তো জানে এরা ফ্যাসিবাদী। তারপরও দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে অন্যটা। বলে, এদের ফ্যাসিবাদ যাতে মানুষ ভুলে না যায়, তাই তাই বলতে হবে বার বার। আমার এখানে কোনো ডিফারেন্স নাই।
জুলকারনাইন সায়ের : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর যে ভূমিকা ছিল, এই ভূমিকা বিভিন্নভাবে আমরা সামনে এনেছি। এখন একটা নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশে আছে। এই প্রজন্মের সামনে আপনারা জামায়াতের অবস্থান কীভাবে ব্যাখ্যা করতে চান। এবং জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে কোনো প্রকার গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না। অথবা এরকম কোনো কিছু তারা সমর্থন করেছে কি না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
শফিকুর রহমান : এ বিষয়ে আমার মতামত শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই। ওনার যে পজিশন ছিল, জামায়াতের সেম পজিশন ছিল। ওনার পজিশন ছিল ওনি অ্যারেস্ট হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে ডিক্লিয়ার করেন নাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, কারণ এটা ওনার রাইটস ছিল, ওনি পুরো পাকিস্তান শাসন করবেন। ওনার দল উইন করেছে। ওনি পুরো পাকিস্তান শাসন করবেন। ওনি লাড়ই করেছেন তার রাইট তার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। জামায়াতে ইসলামী সেই দাবি জানিয়েছে সবার আগে যে, নির্বাচিত দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। তারপর তিনি অ্যারেস্ট হয়ে গেলেন, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা সরাসরি দিয়ে যেতে পারেননি। এটা কীভাবে হয়েছে এটা নিয়ে কথা আছে। আমি সেই চ্যাপ্টারে যাচ্ছি না।
আর্মি যখন ক্রাকডাউন করলো এই দেশে, ২৫ তারিখেই তো, ওনি অ্যারেস্ট হলেন, আমরা দেশের ভেতরে বন্দি হয়ে গেলাম, পড়ে গেলাম, সে সময় সামরিক শাসন চলছে। আমাদের পক্ষে ভারতে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বলবেন কেন ছিল না, ভাসানী সাহেবের নামের আগে শুধু মাওলানা ছিল, চারদিনের বেশি ওনি কলকাতায় থাকতে পারেননি। জান নিয়ে ওনি পালিয়েছেন, আবার পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসছেন। কারণ তার নামের আগে মাওলানা আছে। ওনি তো জামায়াতে ইসলামী করতেন না, এমনকি কোনো ইমলামি দলও করতেন না। র্যাদার একটা বাম ওরিয়েন্ট দল করতেন। ন্যাপ করতেন ওনি। সেই ন্যাপের লিডার হয়ে তাকে শুধু মাওলানা হওয়ার কারণে ভারত অ্যাকসেপ্ট করেনি। তাহলে জামায়াতে ইসলামীকে অ্যাকসেপ্ট করত? ইসলামী দলকে করত? শুধু জামায়াতে ইসলামী না তো, কোনো ইসলামী দল তো যায়নি। সকল ইসলামী দল তখন কী করবে। তাহলে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংশ তখনও। তারা এক পাকিস্তান, ইউনাইটেড পাকিস্তানের পক্ষে তাদের মত ব্যক্ত করেছেন। এখন ধরেন, মত ব্যক্ত করা অপরাধ না। কিন্তু কোনো অপরাধ করছে কি না। কাউকে খুন করেছে কি না, সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে, আগুন জ্বালিয়েছে কি না। মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে কি না। আমরা মনে করি, এটা করে নাই। বলতে পারেন, আপনি মনে করেন কেন? মনে করি, কারণ শেখ মুজিবু সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় ২৪ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। সেগুলো বাছাই করে মাত্র ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী করা হয়েছে। ওই ২৪ হাজারেও জামায়াতের নেতা নাই, ১৯৫ জনেও জামায়াতের নেতার নাম নাই। ৪২ বছর এই নিয়ে কোনো কথা নাই।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জামায়াতে ইসলামী একটা সরকারের পার্ট হয়ে দুটি মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সফলভাবে, সত্যতার সাথে, দক্ষতার সাথে চালাইলো। যখন একটা পরিবর্তন এসে গেল, চমকে গেল এটা দেখে। সেই সময় তারা নড়েচড়ে উঠলেন। জামায়াত ইসলামকে তাদের এখন বিচার করতে হবে। এই শুরু হলো। ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনের ইশতেহারে বললেন, তারা যদি ক্ষমতায় যান তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। করেন, অসুবিধা নাই। যুদ্ধাপরাধী কারা সেটা তো শেখ মুজিবুর রহমান ফাইনালাইজ করে গেছেন। পারলে তাদের বিচার করেন দেখি। পাকিস্তানে কেউ জীবিত থাকলে তাদের বিচার করেন। যদি আপনি তাকে মরার পর বিচার করতে চান করেন। এখন যদি আপনি বাংলাদেশের কাউকে নতুন করে যুদ্ধাপরাধী বানান, তাহলে হাজার প্রশ্ন উঠবে। তখন কেন এটা লিস্টেড হয়নি। থানাগুলোতে কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল না। তখন কি জামায়াত আদৌ কোনো ফ্যাক্টর ছিল যে জামায়াতের ভয়ে কেউ কোনো মামলা করে নাই?
তখন তো জামায়াত এই পজিশনে ছিল না। এমনি জামায়াতে ইসলামীর লোকদের নাগিরত্ব হরণ করা হলো। কিন্তু সেই নাগিরত্ব যাদের হরণ করা হলো তাদের বিরুদ্ধেও তো কোনো মামলা দেওয়া হলো না। যে ৪৬ জনের নাগিরত্ব হরণ করা হলো তাদের মধ্যে তো জামায়াতের দুজন ছিল, তাদের নামেও তো মামলা দেওয়া হলো না।
৪২ বছর পর এই মামলার গ্রাউন্ড কীভাবে তৈরি হলো। কোথায় থেকে আসল। এরপরও আমি বলব, একজন সিনসিয়ার নাগরিক হিসেবে আমি বলব, যদি সন্দেহাতীতভাবে ওই সময় কারও কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়, তিনি তার শাস্তি পাক। যদি জামায়াত সেই সময় কোনো ভুল করে, এটাও যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া, আমি আমার জায়গা থেকে মাফ চাইবো। আমার কোনো সমস্যা নাই। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু সত্য হচ্ছে, এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হতে হবে।
এর পরের চ্যাপ্টার , ১৯৯২ সাল থেকে তো মানুষ আমাদের দেখতেছে। আমরা তো অন্য কোনো দেশ থেকে আসি নাই। প্রসঙ্গক্রমে আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমাদের সাথে তো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা আছেন এই সংগঠনে। যারা সরাসরি ফাইট করেছেন তারা তো আছেন, তারা কীভাবে এখানে আসল? সব দেখে আসল। নিশ্চয় জামায়াতের মধ্যে ভালো কিছু একটা দেখেছে, সে কারণে এখানে এসেছে। যে সংগঠনকে অনবরত গালি দেওয়া হচ্ছে, চাপ দেওয়া হচ্ছে, বিপদে রাখা হচ্ছে, খুন-গুম করা হচ্ছে। আগেও তো আমাদের ওপর এমন হয়েছে, তো এই সংগঠনে আছে কেন? নিশ্চয় এই সকল চ্যালেঞ্জের পরও ভালো কিছু পেয়েছে বলে লোকেরা এখানে আসে।
এই সবকিছু একদিকে রাখেন। একটা সিঙ্গেল উদাহরণ কেউ কি দিতে পারবে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ইগনোর করে, অপমান করে কথা আমাদের নেতৃত্বের পক্ষে থেকে বলেছে। কথা তো রেকর্ড হবে তারা কি বলেছে। কিন্তু এখন সমর্থক কী চিৎকার দিল সেটা বড় কথা না।
বড় কথা হলো দলের নেত্রীয়স্থানীয় ব্যক্তিরা যদি কোনো কিছু বলেন, ভালো হোক, মন্দ হোক, এটা রেকর্ড থাকতে হবে। এটার সামাম্য কেউ রেকর্ড দেখাতে পারবে? আমরা তো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে ওন করেছি, বুকে ধারণ করেছি সম্মান-শ্রদ্ধার সাথে। এবং এই দেশের স্বাধীনতার জন্য যদি আল্লাহর মেহেরবানিতে জীবন দেওয়ার সুযোগ হয় আমাদের, তাহলে দেব স্বাধীনতা রক্ষা জন্য। আমরা তো সেটা ওন করি। যদি কেউ মনে করে আমাদের দ্বারা কোনো কষ্ট পেয়েছে, আমরা দেখবো এটা কীভাবে ডি-ফিউজ করা যায়।
জুলকারনাইন সায়ের : যদি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করতে সফল হয়, সেই সরকার অবশ্যই গণতান্ত্রিক মাধ্যমে নির্বাচিত হবে, তারপর শাসন আমলটা কেমন হতে পারে? অনেক ব্যক্তি, অনেক মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শরিয়া আইন জারি হবে, দেশে মহিলারা কাজ করতে পারবেন না। বোরকার মধ্যে থাকতে হবে। এবং সেক্যুলারিজমের সাথে একটা কনফ্লিক্ট দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
শফিকুর রহমান : বাংলাদেশে বর্তমানে সেক্যুলারিজমের অবস্থা হচ্ছে, সব ধর্মের লোকেরা তার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। কিন্তু একজন মুয়াজ্জিম মসজিদে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে নিজের ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। মসজিদের ভেরতে মারামারি করা হয়েছে। অনেক তাফসির মাহফিল পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে সবকিছু ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবগুলো চাপ হচ্ছে এখনকার মুসলমানদের ওপর। আজকেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সেই প্রশ্ন আমার কাছে এসেছিল। সেক্যুলারিজম যদি এমন হয়, সকল মানুষ তার বিলিভ অনুযায়ী তার পারফর্ম করতে পারবে। শুধু করতে পারবে না, নিরাপত্তার সাথে করতে পারবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। যেমন এবারকার এই আন্দোলনের পর, কোনোভাবেই যাতে তারা সাবোটাস করতে না পারে। পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে।
এ জন্য সকল ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আমরা টানা ১৫ দিন পাহারা দিয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে এবং রোদে পুড়ে। পরে সরকার যখন দায়িত্ব নিয়েছে তখন আমরা জানতে চেয়েছি আমাদের আর পাহারার দরকার আছে কি না। তারা বলেছে আর লাগবে না। আমরা অন্যান্য ধর্মের লোকজনের সঙ্গে বসেছি। জিজ্ঞাসা করেছি আমাদের আর থাকা লাগবে কি না, তারা বলেছে আপাতত আর না। আমরা যদি প্রয়োজন ফিল করি অবশ্যই সম্মানের সঙ্গে আপনাদের স্মরণ করবো। আমরা গ্রেটফুল যে আমরা ওই সময় তাদের পাশে থাকতে পেরেছি। তারা আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছে। যদি আল্লাহর মেহেরবানিতে আমাদের হাতে দেশ আসে, তাহলে ইনশাআল্লাহ সকল ধর্মের মানুষ সম্মানের সাথে তার ধর্ম পালন করতে পারবে।
নম্বর টু, জেন্ডার ইস্যু। মহিলারা কী করবে। তাদের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি কী হবে। জেন্ডার ইস্যুতে মহিলাদের ব্যাপার হচ্ছে, তারা আমাদের মায়ের জাতি, বোনের জাতি, মেয়ের জাতি। আমরা এই শ্রদ্ধার আসনটা শক্ত করব। বহু পেশায় তারা আছেন। সম্মানের সাথে তারা অনেক জায়গায়, নিরাপত্তার সাথে কাজ করতে পারেন না। সেই সময় সম্মান আর নিরাপত্তা তাদের জন্য আমরা নিশ্চিত করব। বলবেন, এর প্রমাণ আছে কি না। আমাদের নিজেদের হাতে বড় বহু প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে সকল ধর্মের ছেলে এবং মেয়েরা কাজ করছে, পড়ছে। কেউ যদি চান দেখে আসতে পারেন। সিলেটে আমার নিজের প্রতিষ্ঠান আছে ওমন মেডিকেল কলেজ। কালবেলার একটা সংবাদ বিফ্রিংয়ে আমাকে বলেছিল, আমি কি দেখতে পারি কি না। আমি বলেছিলাম, আপনি যান। ইন্ডিভিজুয়ালি প্রত্যেক লোকের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি একটা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করেছেন। তিনি সকল ধর্মের লোকদের সেখানে ইন্টারভিউ করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের করেছেন। আমি তো এই সংগঠনের দায়িত্বশীল। প্রধান দায়িত্বশীল, যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক, সেখানে কি আমি কাউকে জোর করে স্কার্ফ পরিয়েছি? সেখানে স্কার্ফ পড়া মানুষও আছে, স্কার্ফ ছাড়া মানুষও আছে। একটা হিন্দু মেয়ে যদি স্কার্ফ না পরে , একটা মুসলিম মেয়েও যদি স্কার্ফ না পরে, জোর করবো তার ওপর? আমি তাকে উৎসাহ দিতে পারি, জোর করার অধিকার তো আমার নেই। ইসলাম ওই জোরাজুরির ধর্ম না। দিন পালনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। হ্যাঁ, ভালো কাজের মোটিভেশন চালাতে হবে। এবং মোটিভেশনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের জগতের পরিবর্তন আসে। মনের জগতে যদি পরিবর্তন আসে তাহলে বাহ্যিক সবকিছুতে পরিবর্তন আসবে। আসল কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আসবে। আমরা ওইটাকে বিশ্বাস করি। আমরা চাপানোতে বিশ্বাস কনি না। যুদ্ধে রসুল করিম (স.) আমাদের মা-বোনদের নিয়ে গেছেন। উহুদের ভয়াবহ যুদ্ধে আল্লাহর রসুলের কঠিনতম সময়ে যিনি ঢাল হিসেবে ঘুরে ঘুরে রসুলকে সেফ করেছিলেন তিনি পুরুষ না, মহিলা। আমি গর্ব করি তাদেরকে নিয়ে। একটা সমাজের সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটা? যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রসুল তাদের শরিক করেছেন। তাহলে তারা কোন কাজটায় বাদ পড়বে বলেন তো? বাস্তবে সমাজে একটা ভীতি ছড়ানো হয়, যাতে আমাদের সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়।
এবার আসি শরিয়া আইনে। শরিয়া ল বলতে, একটা কনসেপ্ট হচ্ছে, ধরে ধরে গলা কাটা আর হাত কাটা। এটা তো শরিয়া ল না। শরিয়া ল তো ডিভাইন ল। যিনি সব ক্রিয়েশনের ক্রিয়েটর। তিনি তার সৃষ্টি জন্য সর্বোত্তম আইনটা পাঠিয়েছেন। এই আইনের বলেই তো ভারতবর্ষ মুসলমানরা ৭০০ বছর শাসন করেছে। যাদের সংখ্যা অনুপাতে ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। ৭ শতাংশ মুসলমান ৯৩ শতাংশ অন্য ধর্মের মানুষদের শাসন করেছে। এটা কি শুধু তরবারের বলে? এটা তাদের গুণের বলে তারা করেছেন। সেখানে যে ইসলাম কায়েম ছিল বিষয়টা এমন না। ইসলামের কতিপয় বিধান তারা এখানে চালু করেছিল। পুরাটা চালু করলে আরও চমৎকার হতো। বর্তমান যে কনভেনশনাল ল আছে, ম্যাক্সিমাম পয়েন্টে কিন্তু শরিয়া ল এখানে মিলে যায়। কনফ্লিক্ট করে না। আর যে বিষয়গুলো কনফ্লিক্ট করে সেটা রিভার্স করারও ব্যবস্থা হবে।
জুলকারনাইন সায়ের : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শফিকুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
যাযাদি/ এস