আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত শুক্রবার শেষ রাতে অবৈধ পথে ভারতে পালিয়েছেন বলে আবার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। পুলিশ অবশ্য এর পরদিন শনিবার মধ্য রাতে তাকে ধরতে চট্টগ্রামের হালিশহরের শান্তিবাগে স্ত্রী ইশরাতুন্নেসার বড় ভাই নুরুল হুদার বাসায় ব্যর্থ অভিযান চালিয়েছে।
দামি ঘড়ি ও কোট-টাই ব্যবহারে অভ্যস্থ সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিয়মিত নেতিবাচক ট্রল চলত। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। দলের নেতাকর্মীর কাছে চলনে-বলনে অন্য রকমের নেতা ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক এক সভায় ‘কাউয়া’ শব্দ উচ্চারণ করেও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ধারণা, শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে রোববার দলীয় কর্মসূচি ঘোষণার পর ওবায়দুল কাদের নিজের দায়িত্ব ও একধরনের ঝুঁকি এড়াতে তড়িঘড়ি করে পালিয়ে গেছেন। এতে খুব একটা সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি। কেননা ভারতেও তাকে আত্মগোপনেই থাকতে হবে।
দেশটিতে আগে থেকে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানল থেকে বাঁচতে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভারতে লুকিয়ে আছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
তাদের ভাষায়, ক্ষুব্ধ নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। তার সঙ্গে দেখা হলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছুই ঘটতে পারে।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ মাঝারি পর্যায়ের অনেক নেতা ভারতে পালিয়েছেন। তাদের কয়েকজন গতকাল সোমবার জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদের ভারতের কলকাতায় পৌঁছেছেন বলে তারা শুনেছেন। তবে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। টেলিফোনেও কথা হয়নি।
নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ওবায়দুল কাদের শুক্রবার শেষ রাতে সিলেট কিংবা ময়মনসিংহ সীমান্ত হয়ে অবৈধ পথে ভারত যান। পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে দেশ ছাড়ার সুযোগ না থাকায় তাকে শুক্র ও শনিবার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করতে হয়েছে। পরে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে রোববার ভারতের অভ্যন্তরীণ পথে চলাচলকারী বিমানে করে তিনি কলকাতায় যান। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা তার সঙ্গে ভারত যাননি।
ভারতে যাওয়ার আগে ওবায়দুল কাদের আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে রাজধানীর গুলশান থেকে যশোরে যান। সেখানে তিনি তার নিকটাত্মীয় প্রভাবশালী একজন সরকারি কর্মকর্তার শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান নেন। তখন থেকে ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় থাকেন। এর আগে তিনি গুলশানে একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে আগে থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। পরে ২৪ আগস্ট পান্না ভারতীয় সীমান্তে মারা যান।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সর্বশেষ অবস্থান জানার জন্য গত দুদিন তার মোবাইলের দুটি নম্বরে দফায় দফায় ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপও ছিল বন্ধ। আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদেরবিরোধী নেতাদের (ভারতে আত্মগোপনে থাকা) কাছে দলের সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান জানতে চাইলে প্রায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, তিনি কলকাতায়। তবে রোষানল এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে আছেন।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা দলের সাধারণ সম্পাদকের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য ওবায়দুল কাদেরকেই দুষছেন। এ জন্যই ভারতে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে নেতাদের দেখা হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির শঙ্কা রয়েছে বলে জানান পলাতক কয়েকজন নেতা।
যাযাদি/ এস