কাদের ঘনিষ্ঠ মহিলা লীগ নেত্রী মুন ছিলেন এলাকার ত্রাস

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২২:১৬

বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
ছবি সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণজমায়েত কর্মসূচি গতকাল পালিত হয়। এ সময়ে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্র-জনতার হাতে মারধরের শিকার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী মহিলা লীগের সদস্য ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সহ-সভাপতি ফেরদৌসী মজুমদার মুন। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের আফালকাঠি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মৃধার মেয়ে ফেরদৌসী মজুমদার মুন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী মহিলা লীগের সদস্য এবং ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সহ-সভাপতি পদে থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ ও সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করে ছবি তুলে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বাকেরগঞ্জের নলুয়ায় প্রভাব বিস্তার করে রামরাজত্ব কায়েম করেন আওয়ামী লীগের এই মহিলা নেত্রী।  

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙানো আর তদবির বাণিজ্য থেকে শুরু করে নিজ এলাকা অফালকাঠি গ্রামে ২০২০ সালে মমতাজ মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন ও প্রতিবন্ধী স্কুলের ব্যবসা ব্যবহার করেই বিভিন্ন প্রতারণার জাল ছড়িয়ে উপরে উঠে আসেন ফেরদৌসী মজুমদার মুন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ নিজ এলাকার আফালকাঠি গ্রামে গড়ে তোলেন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন ফেরদৌসী মজুমদার মুনের আপন বড় বোন হেলেনা। নলুয়া ইউনিয়নের কারখানা নদীর চর দখলসহ এলাকায় অসহায় দরিদ্রদের জমি দখল ছিল এই সিন্ডিকেটের প্রধান কাজ। ফেরদৌসী মজুমদার মুনের হাত থেকে রক্ষা পাননি সৎভাই সুমন, সুজন, মিঠুসহ সৎবোন লাভলি আক্তার। ক্ষমতার দাপটে তাদের জমিজমাও দখলে নিয়েছেন ফেরদৌসী মজুমদার মুন ও তার বোন হেলেনা।

বিভিন্ন স্থানে তিনি সুবিধাজনক পরিচয় দিতেন। কখনো তিনি নিজেকে রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলেও এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। চাকরি না পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ওই টাকা ফেরত চাইতে গেলেই তারা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন একাধিকবার।

বিশেষ অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যে জানা গেছে, নলুয়া আফালকাঠি গ্রামে প্রতিবন্ধী, শিশু ও বয়স্ক গণশিক্ষা কেন্দ্রের সভাপতির দায়িত্ব থেকে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী।

আফালকাঠি গ্রামের নুরু মুন্সি অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরি করত। তার চাকরি সরকারি করে দেয়ার নামে এক লাখ টাকা নিয়েছেন ফেরদৌসী মজুমদার মুন। ৭নং ওয়ার্ডের জাকির হাওলাদার ও ৯নং ওয়ার্ডের ইমরান আলী মৃধার কাছ থেকেও দুই লাখ টাকা নিয়েছেন চাকরি দেয়ার নাম করে। এছাড়াও প্রতিবেশী সুমন মৃধার বাড়িঘর লুটপাট করে জমি দখল করেছেন।

নলুয়া ইউনিয়নে ২০২১ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ফেরদৌসী মজুমদার মুন। এছাড়াও তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ৬১, ৬২ ও ৬৩নং ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন। আর এসব নির্বাচনে অবৈধ পথে উপার্জিত লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন।

তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। স্বামীর বাড়ি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া হলেও রাজত্ব করেছেন বাবার বাড়ি বরিশালের নলুয়া ইউনিয়নে। নিজ গ্রামে অন্যের জমি দখল করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নলুয়া গ্রামের বাড়িতেও দুই তলা একটি ভবন রয়েছে তার। শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া ফেরদৌসী মজুমদার মুনের এসব অবৈধ সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন তার আপন বোন হেলেনা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করলে আত্মগোপনে চলে যান মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার মুন। তবে তার আপন বোন হেলেনা এখনো বহালতবিয়তে রয়েছেন। ফলে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ফেরদৌসী মজুমদার মুনসহ তার বোন হেলেনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে গত ২ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। ফেরদৌসী মজুমদার মুনের গ্রেপ্তারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জনমনের স্বস্তি নেমে এসেছে।

যাযাদি/ এস