আগামী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের দাবি জোরাল করার বিষয়ে ভাবছে দলটি। সোমবার রাতে দলের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকে দলের নেতারা পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে, সেটা নিয়েও আলোচনা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় এই বৈঠক শুরু হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভায় দলের নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা দীর্ঘ হলে দেশে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে। তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে নির্বাচনের রোডম্যাপ জরুরি। কিন্তু সার্চ কমিটি গঠন হলেও সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে স্পষ্ট কিছু না বলায় দলটির শীর্ষ নেতাদের মনে সন্দেহ তীব্র হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সভায় আাগমী বছরের মার্চ কিংবা এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব; এ বিষয়ে নেতারা নানা যুক্তি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে মার্চ-এপ্রিলেই নির্বাচন দিতে হবে; এই মর্মে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি তোলার পক্ষে সবাই মত দেন।
তবে অন্য এক নেতা বলেন, মার্চ-এপ্রিল সময়টি নির্বাচনের জন্য অতি দ্রæত হয়ে যায়। এই নেতা মনে করেন, রাষ্ট্রের ন্যূনতম সংস্কারের জন্য আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করলে সেটাই হবে যুক্তিযুক্ত।
সভা চলাকালে বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, এই মূহর্তে নির্বাচনের জন্য সরাসরি দাবি না করে আমরা মার্চ কিংবা এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব বলতে পারি। শুধু তাই নয়; কী প্রক্রিয়ায় সেটা সম্ভব, সে বিষয়ে যথাযথ যুক্তি জাতির সামনে তুলে ধরতে পারি। এই নেতার মতের ভিত্তিতে অন্য নেতারা নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে হবে? কী প্রক্রিয়ায় ঘোষণা করা উচিত, সেটা বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তাব দেন। সম্মতি দেন সভার প্রধান নেতা তারেক রহমান। সভায় মতামত এসেছে, দ্রুততম সময় সরকারের উচিত, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া। বিএনপি আগামী দিনে তাদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মসূচিতে দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার হবে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই এ বিষয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে দিন-তারিখ ঠিক করে দেইনি। আমরা বারবারই বলেছি, অতি দ্রুত এই নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি, এটা হতাশার। এ কারণেই সরকারের উদ্দেশে এখন আমাদের জোর গলায় বলতে হচ্ছে- ‘দ্রুত নির্বাচন দিন’।”
বিএনপির এই সিনিয়র নেতার দাবি, যত দিন যাবে, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে এবং ইতোমধ্যে সরকারের এই উপলব্ধি শুরু হয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পর্কে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ড. ইউনূসকে জানানো হয়েছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ হবে যথাযথ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। এর জন্য ৯-১০ মাস সময় লাগতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সোমবারের সভায় উল্লেখযোগ্য একিট এডেন্ডা ছিল ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়টি।
সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভার শুরুতেই নির্বাচনের যৌক্তিক সময় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এরপর নেতারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। নতুন ভোটার তালিকা নিয়ে সভায় বিএনপির বেশিরভাগ নেতার যুক্তি ছিল, এই মুহূর্তে নতুন করে ভোটার তালিকা করা সময়সাপেক্ষ। এই প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতাও রয়েছে। এতে নির্বাচনের সময়সীমা আরও ঝুলে যাবে। ফলে সরকার নতুন করে ভোটার তালিকা করার যে চিন্তা করছে, বিএনপি সেটা সমর্থন করবে না। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে পুরনো তালিকায় কিছু ‘সংশোধন ও নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত’ করার থাকলে সে বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই।
এদিকে, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি। প্রথম বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং কেউ ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নাম দিতে পারবেন। এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দলটির দুইজন নেতা সভায় বলেন, একটি ‘মেজর পলিটিক্যাল পার্টি’ হিসেবে সরকারের কাছে বিএনপির গুরুত্ব কমছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। কমিশন গঠন করার আগে সরকার বিএনপির সঙ্গে আলাদা করে বসতে পারত। এখন সার্চ কমিটি গঠনে সবার সঙ্গে বিএনপিকে পাঁচটি করে নাম জমা দিতে হবে এটা মানা যায় না। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় জামায়াতের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা সমালোচনা করেন শীর্ষ নেতারা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর-বিক্রম এবং ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ।
যাযাদি/ এসএম