ঝিনাইদহে ভার্চুয়াল সভায় তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারে

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
ছবি: যায়যায়দিন

জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকারই কেবল গণতন্ত্র ও দেশে উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সেদিনও আমাদের সমর্থন ও আস্থা ছিল, আজও আছে। তবে তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ কিন্তু তাদেরকেই নিতে হবে।

শনিবার বিকালে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে ছাত্র-জনতার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। 

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট এমএ মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, বিএনপিপন্থি আইনজীবি নেতা রুহুল কুদ্দুস কাজল ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা । 

সমাবেশকে ঘিরে গোটা ঝিনাইদহ জেলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হলেও দুপুর ১২টা থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে। দুপুর আড়াইটার পর মিছিলে মিছিলে সমাবেশস্থল লোকে লোকারন্য হয়ে উঠে। এসময় জাতীয় সঙ্গীত ও  দেশের আলোচিত সঙ্গীত শিল্পি মৌসুমির “দেশটা তুমার বাপের নাকি করছো ছলাকলা” গান দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।

তারেক রহমান বিকাল ৪.৪০টার দিকে ভার্চুয়াল সমাবেশে যুক্ত হয়ে ১১ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এসময় তারেক রহমান বলেন, নির্বাচিত সরকারের কোন বিকল্প। আগষ্টের যে বিপ্লব, জনগনের সফলতা আমাদের আর একটি স্বাধীনতা এবং বিজয়ের বার্তা নিয়ে এসেছে। স্বৈরাচার পতনের এ মহা সমরে আন্দোদলনের সফলতা দেশের রাজনৈতিক দল সর্বস্তরের মানুষ ছাত্র জনতা গৃহিনী শ্রমিক সরবার অবদানকে মর্যাদা দিতে ব্যবর্থ হয়, বিশেষ করে গত ১৭ বছরে অবিরাম আন্দোলনে গুম খুন হামলা মামলায়  লাখ লাখ  কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়নে ব্যর্থ হয় তাহলে ইতিহাস আমাদের কিন্তু ক্ষমা করবে না। প্রিয় ভাই বোনেরা আজ আসুন আমরা সকলে মিলে শপথ গ্রহন করি। গত ১৭ বছর এবং বিশেষ করে জুলাই এবং আগষ্টে যে মানুষ গুলো আত্মহুতি দিয়েছে। যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা পাবে যেদিন দেশের মানুশের অর্তনীলতিক মুক্তি পাবে।

তারেক রহমান আরো বলেন, আমরা আজ এমন একটা পরিবেশে সমবেত হয়েছি যেখানে কারো কোন ভয় নেই। সকলে আমরা শংকামুক্ত পরিবেশে একত্রিত হয়ে কথা বলছে পারছি। আমরা আমাদের কথা বলার জন্য একই সাথে আমরা অন্যের কথা শোনবার জন্য একত্রিত হয়েছি। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে কথা বলতে পারতো না। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টের কথাও স্বাধীন ভাবে বলতে পারতাম না। বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। কি ভাবে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছিল। ঝিনাইদহ জেলায় জাতীয়তাবাদী দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদেরকে আমরা হারিয়েছি। মিরাজুল, দুলাল ও পলাশসহ বহু মানুষকে হারিয়েছি। ফ্যাসিষ্ট সরকার পতনেও এই জেলার মানুষ সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। দেশের মানুষ গত ৫ আগষ্ট এই স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়েছে। জনগনের আন্দোলনের মুখে যে স্বৈরাচার জনগনের বুকের উপর চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সকল মানুষের কৃতিত্ব। আজকে যখন স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখন দেশের জনগরে দাবী ছিল দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট শুন্যতা পুরণের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। গত ১৬ বছরে বিশেষ কত এই জুলাই-আগস্টে যে মানুষগুলো আন্দোলনে গিয়েছে, যে মানুষগুলো সবকিছু উজাড় করে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মেও জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের এই আত্মত্যাগ সেদিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এদেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে। সেদিনই বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। সেদিন আমাদের এই আন্দোলনের শহিদদের, ৭১ এর শহিদদের এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ সফলতা লাভ করবে। আজ আমাদের সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক মঞ্চে। যা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। দলমত নির্বিশেষে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শিক্ষার্থী নিরাপত্তা ও শিক্ষাগ্রহণের যে গ্যারান্টি চায়, প্রতিটি কৃষক তাদের অবদানের যে স্বীকৃতি চায়, এই সকল কিছু সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সকলকিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তারেক রহমান দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়া উপেক্ষা করে তার বক্তব্য শোনার জন্য ঝিনাইদহের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আসুন, আমরা আন্দোলন করে, সংগ্রাম করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। আমরা জনগণের প্রত্যাশা পুরনে কাজ করি। আসুন আমরা বৈষম্যহীন সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ হই।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড এম এ মজিদ সমাবেশে জানান, খুন গুমের রাণী শেখ হাসিনা নিয়ন্ত্রিত দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের দু”শাসনামলে বিএনপি ঝিনাইদহে বড় কোন সমাবেশ করতে পারেনি। সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে পন্ড করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের সমাবেশ থেকে গ্রেফতার করে জেলে ঢোকানো হয়েছে। আওয়ামী দুঃশাসনের প্রতিবাদ করে প্রায় ৩০ জন বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হয়েছেন। ১১ হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করেছে। অনেকেই হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে পিষ্ট হয়ে সম্পদ ও সংসার হারিয়েছেন। তাই বিএনপির আজকের এই সমাবেশ বিএনপির লাখো কর্মীদের কাছে বেঁচে থাকার একটি উজ্জীবনী বার্তা বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।       

যাযাদি/ এসএম