রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে হাসিনা : মির্জা ফখরুল  

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭
ছবি : যায়যায়দিন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেন, অবিলম্বে দেশ ধ্বংসকারী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি দেন। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে হাসিনা এখন ভারতে আছেন, সেখানে বসবাস করছেন। আমরা বারবার বলছি ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি, যে একজন খুনি, যে গণহত্যা করেছে, তাকে জায়গা দিবেন না, যে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, গণহত্যার আসামি হয়েছে, তাকে জায়গা দিবেন না। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের এ বিষয়ে কিছুই বলেনি।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে কিন্তু তার প্রেতাত্মা (ভূতরা) এখনো দেশের মধ্যেই আছে। তারা এখন দেশের মধ্যে থেকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে বিশেষ করে শিল্প কারখানা এলাকায় ষড়যন্ত্র করছে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজ মাঠে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, তার সময় আমাদের অনেক মানুষকে হত্যা করেছে, শ্রমিক, দিন মুজুর, ছাত্রদের হত্যা করেছে। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে নির্যাতন করেছে। এখন আমরা দম ফেলতে পারছি, রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।

অন্তবর্তীকালিন সরকারের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ড. ইউনুসকে সারা পৃথিবীর মানুষ শ্রদ্ধা করে। তিনি দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট লোকদের নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। আমরা তাদের বলেছি আওয়ামীলীগের জঞ্জাল মুক্ত করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে। আমরা ভোট দিতে চাই, ভোটের মাধ্যমে সরকার ও পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই। বাংলাদেশের সমগ্র মানুষের ত্যাগ তিক্ষার বিনিময়ে আমরা হাসিনা মুক্ত ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পেরেছি। এখন স্বাধীনতা রক্ষার করার দায়িত্ব আমাদের।

মহাসচিব নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য ফখরুল বলেন, এ শিল্পকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আপনারা নেতাকর্মীরা সবাই মিলে। শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এদের প্রতিহত করুন। মনে রাখবেন দেশের ৫০ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। এ খাতকে যদি ক্ষতি করা যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঠিক থাকবে না। দেশের মধ্যে থেকে তারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা যে লুটপাট, চুরি করছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে এগুলো ভুলতে পারছে না। তারা ভাবছে যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম তাহলে আবার চুরি করতে পারতাম, লুটপাট করতে পারতাম। এজন্যই তারা দেশের শিল্প কারখানা বিশেষ করে পোশাক শিল্প ধ্বংসের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এ খাতের ক্ষতি কারতে চায় তারা, যারা জোর করে আবারও বাংলাদেশে লুট করতে চায়। তাদের সঙ্গে আরো একটা শক্তি আছে, সেটা হলো বাইরের শক্তি। ভারতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তারাই তারা জানে আমাদের শিল্প ধ্বংস হলে তাদের দেশে কাজ চলে যাবে। তারা ভাবে বাংলাদেশের এ খাতকে যদি নষ্ট করে দিতে পারি তাহলে তাদের দেশের রপ্তানী খাত বাড়বে। যারা আমাদের ভাল দেখতে পারে না তারাই এ কাজটি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর শেখ হাসিনা ওই ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, ভারতেই বসবাস করছে। আমরা বার বার বলেছি, ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি হাসিনা একজন খুনি, যে গণহত্যা করেছে তাকে জায়গা দেবেন না।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে, গুলি করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। ছাত্র, শ্রমিক, জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনা পালিয়ে গেছে। এখন আমরা দম ফেলে বাঁচতে পারছি। রাত্রে আরাম করে শুতে পারছি। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে এই বাংলাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে আমাদের অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। হাসিনা নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে সংগ্রামের পরে আমরা এই দুঃশাসন থেকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। হাসিনা চলে গেছে, হাসিনা পালাইয়া গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যত পণ্য রপ্তানী হয়েছে তার শতকরা ৮৫ ভাগ রপ্তানী হয়েছে পোশাক খাত থেকে। ওই সময়ে এ খাত থেকে আমাদের আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৬লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আমাদের শিল্প কারখানা গুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে সেখানে আমরা কোন প্রোডাকশন পাচ্ছি না। আমি অনুরোধ করবো বর্তমান সরকারকে যেসব শিল্প কারখানা আমাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে অবদান রাখে তাদের রক্ষা করুন। আসুন আমরা শপথ নেই আমরা আমাদের কলকারখানা রক্ষা করবো।

তিনি বলেন- আপনারা জানেন যে, নতুন সরকার আমাদের প্রফেসর ইউনুস সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে। তিনি বিরাট মানুষ, নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। গরিব মানুষের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছে। তার গ্রামীণ ব্যাংক সহ সব মিলিয়ে তিনি গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে একজন শ্রদ্ধীয় মানুষ। দেশের কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেছেন। এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি যে, গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামীলীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে এই জঞ্জালগুলোকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দূর করে একটা পরিবেশ তৈরি করেন। যেখানে সকল রাজনৈতিক দলগুলো একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। তিনি এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, কথা পরিষ্কার আমরা ভোট দিতে চাই। ভোট দিয়ে আমরা পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই। আমরা আমাদের সরকার নির্বাচন করতে চাই। আমরা ওই কথাটা বিশ্বাস করি আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দিবো। আওয়ামী লীগ এতোদিন কি করেছে যে, আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দিবো। কখনো আবার ভোটও নেয় নাই।

বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের তৈরীকৃত জঞ্জাল দূর করে দ্রুত নির্বাচন দিন, জনগন উন্মুখ হয়ে আছে ভোট দিয়ে তাদের সরকার নির্বাচিত করার। শিল্প কারখানার নিরাপত্তা দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, অনেক কারখানা মালিক নিরাপত্তাহীনতায় আছেন, তাই সরকারকে অনুরোধ করব যত দ্রুত সম্ভব যে শিল্প কারখানাগুলো অর্থনীতি রক্ষা করতে অবদান রাখে তাদেরকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আপনারা শ্রমিকদের সাথে, মালিকদের সাথে কথা বলুন, তাদের নিয়েই এ দেশকে রক্ষা করুন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী সামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান ও হাসান উদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ। সমাবেশে মহানগর ও জেলার শ্রমিক দল এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে