হাসিনা পালিয়ে গেলেও  এখনো সংকট কাটেনি : মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৩৪

গাজীপুর প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে হাসিনা পালিয়ে গেলেও দেশে এখনো সংকট কাটেনি। গাজীপুরসহ দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ করার জন্য যড়যন্ত্র চলছে । সামনে দূর্গাপূজা। তারা দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। 

তিনি বলেন, হিন্দু ভাইদরেকে বলতে চাই আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা যেভাবে আছেন আমরা সবসময় অপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের পূজার ব্যাপারে এই নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজা নিয়ে যেন ব্যাঘাত ঘটতে না পারে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।

 শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আ স ম হান্নান শাহ্র ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত এই আওয়ামীলীগের ফ্যাসীবাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিল। গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। নির্বাচন বলতে কিচ্ছু ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলুন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বলুন, আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বুলন। তারা তাদের প্রার্থীদেরকে নির্বাচিত করবার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে (পুলিশ ও প্রশাসনকে) ব্যবহার করেছে। জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য তারা প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতি ব্যবস্থা সবকিছুই তারা কুক্ষিগত করে রেখেছে। বিগত ১৭ বছরে তারা বাংলাদেশে দুর্ণীতির নজিরবিহীণ দৃষ্টান্ত করে গেছে। শেখ হাসিনা সরকার ধরে নিয়েছিল সে কোনোদিন ক্ষমতা ছেড়ে যাবে না। সে সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবে এবং এইভাবে মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করে তাদের ক্ষমতাকে চূড়ান্ত করবে এবং সম্পদের পাহাড় গড়বে দেশ এবং বিদেশে। আজকে খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন তাদের মন্ত্রী এমপিরা কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে। একটার পর একটা মন্ত্রী ধরা পড়ছে। আল্লাহর বিধান যারা একদিন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল তারাই আজকে দুর্ণীতি ও চুরির দায়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ তাদেরকে কারাগারে পাঠাচ্ছে। শেখ হাসিনা বড় গলায় বলেছিল আমি পালাব না, শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে আমি পালাতে জানি না। সেই শেখ হাসিনা যখন ছাত্র জনতার আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গের সুনামি আসতে শুরু করেছে তখন অতি দ্রুত গণভবন থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে পালিয়ে চলে গেছে। এর জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

গাজীপুরের প্রয়াত বিএনপির নেতা অসম হান্নান শাহ’র সাথে জেলে থাকার স্মৃতির কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হান্নান শাহ ছিলেন সত্যিকারের গনতান্ত্রিক মানুষ। সেনাবাহিনীর পোশাক ছিলো। ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। মনের দিক দিয়ে ছিলেন গনতান্ত্রিক। দেশ নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন।

তিনি  আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম করেছে। হাজার হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তার সরকারের নির্যাতনে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়ীতে ঘুমাতে পারতো না। নেতাকর্শীরা আদালতে হাজিরা দিতে যায়, পুলিশ টাকা চায়, টাকা না দিতে পারলে ধরে নিয়ে যায়, মামলা দেয়। আমাদের নেতা হান্নান শাহ মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিকবার। তারা পালিয়ে গিয়েও যড়যন্ত্র করছে। 

তিনি আরো বলেন,  বর্তমানে যে সরকার এসেছে, এটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। মানুষ বিশ্বাস করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। আর সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তারাও কমিটেড। আমরা বিশ্বাস করি তাদের কথায়, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বেনজির আহমেদ টিটু, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হান্নান শাহ্’র ছেলে রিয়াজুল হান্নান, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

যাযাদি/ এসএম