দেশে ফিরবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার, বললেন জয়

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৫

যাযাদি ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত মাসে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে কথা বলেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, দেশে ফেরার বিষয়টা শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করবে। তার মা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও গত মাসে জানিয়েছিলেন জয়।

এদিকে, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া টাইমলাইনের বিষয়ে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে এই টাইমলাইন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দেরী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জয় বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব।

কোটা সংস্কার ঘিরে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের সময় সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানান। আর এর মধ্য দিয়েই সেই সময় শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়, প্রায় ঘণ্টা খানেকের প্রস্তুতিতে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাব্কে এই প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। এরপর মঙ্গলবার রাতের দিকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে অন্তত এখন একটি প্রত্যাশিত টাইমলাইন আছে শুনে আমি খুশি।’’

তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে সংঘটিত অভ্যুত্থানের ইতিহাসের কথাও উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন জয়। দুই বছর পর ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেন।

শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এরপর থেকে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। দেশে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া প্রচেষ্টায় সামরিক বাহিনীর সমর্থন রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সেনাবাহিনী এই সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।

আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই সংস্কার কাজ শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গঠিত ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

‘‘সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করা হলে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে,’’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসরত সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘‘দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে বৈধ সংস্কার এবং নির্বাচন করা অসম্ভব।’’

গত মাসে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দিল্লির কাছের একটি সেফ হাউসে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সেই সময় আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে আওয়ামী লীগের আরও অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা আত্মগোপনে চলে গেছেন।

জয় বলেছেন, হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে জয়ের এই অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

নির্বাচনী সংস্কার প্যানেলের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করবে নাকি নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করবে, সেটা সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

গত মাসে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরতে পারেন, মঙ্গলবার জয়ের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশে ফেরার বিষয়টা তার (শেখ হাসিনা) ওপর নির্ভর করবে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের লোকজনকে নিরাপদ রাখতে চাই। তাই আমি দলের লোকজনের ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই।

যাযাদি/এসএস