বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

শহীদেরা জাতীয় বীর, কোনো দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না : জামায়াতের আমির

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২০
আপডেট  : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৪৮
টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ঐক্যের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে যেকোনো মূল্যে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এই ঐক্য আমাদরে ধরে রাখতে হবে। যে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন হয়েছিল, কোনো অবস্থায় এমন আরেকটা স্বৈরশাসন কখনো যেন বাংলাদেশে ফিরে না আসে তার ব্যাপারে আমাদের সকলকে সোচ্চার থাকতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের মাথায় কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াতের টাঙ্গাইল জেলা শাখা শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এদেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম। প্রত্যেকটি মানুষ ছিল জুলুমের শিকার। কোনো ঘরে শান্তির লেশমাত্র ছিল না। কেউ কারো বিরুদ্ধে সামান্য কোনো কথা বললে বা মনের দুঃখ প্রকাশ করলে ডিজিটাল আইনে তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই সাড়ে ১৭টি বছর বাংলাদেশের জনগণের জীবনে ছিল দুঃসহ কালো রাত। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনসহ সারাদেশে লগিবৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে শ’খানেক মানুষকে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিজমের সূত্রপাত ওখানেই হয়েছিল। স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনী ওখান থেকেই এসেছিল।’

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমিরে জামায়াত বলেন, ‘এমন রাজনীতি করলেন, বললেন উন্নয়নের রাজপথে দেশেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। বললেন বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এমন মডেল বানালেন আর এমন রাজপথ তৈরি করলেন, গাড়ি চালিয়ে রাজপথ দিয়ে আপনি যেতে পারলেন না। এমন রাজনীতি করলেন, আপনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হলো।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘শেখ হাসিনা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছিলেন। মেজরিটি-মাইনরিটি আখ্যা দিয়ে তাদের মুখোমুখি করে ফেলেছিলেন। ধন্যবাদ জানাই ছাত্রসমাজকে। কারণ আমরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম সাড়ে ১৫ বছর আগে; তার পরিসমাপ্তি টেনেছে তারা। সকল ধর্মের মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সকল ধর্মের মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে। শহীদদেরকে আমরা কোনো দলের সম্পত্তি বানাতে চাই না। এই শহীদরা জাতীয় সম্পদ। এই শহীদরা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, এই শহীদরা আজীবন আমাদের জাতীয় বীর। আমরা তাদের সেই মর্যাদায় দেখতে চাই।’

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, ‘২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পরে তারা রাষ্ট্রের গর্বিত প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর কোমড়ে আঘাত দিয়েছে। পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে ৫৪ জন চৌকস সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে। সেই হত্যাকাণ্ডে বিচার আজও হয়নি। সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বিডিআরকে ধংস করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা আঘাত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। দেশপ্রেমিক পরীক্ষিত এই শক্তির ওপর। এদেশের শুত্রুরা জানে, জামায়াতে ইসলামী ভাঙবে তবু মচকাবে না। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না। দেশের স্বার্থ কারো কাছে বিক্রি করতে রাজি হবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পিছপা হবে না। ৪২ বছর যাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় একটি জিডি, একটি মামলাও ছিল না; তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হলো। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষি এবং সাজানো আদালতের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় ১১ জন নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেয়া হলো।’

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। আমাদের মতো মজলুম সংগঠন আর কেউ না। আর কারো এতগুলো নেতাকে হত্যা করা হয়নি। আর কারো বাড়িঘর বল্ডুজার দিয়ে ভাঙা হয়নি। আর কারো বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়নি, লুটপাট করা হয়নি। আমাদের পর্দানশীল মা-বোনদের উজ্জত নিয়েও টানাটানি করা হয়েছে। মজলুমের আহাজারি আল্লাহ শুনেছেন।’

তিনি বলেন, ‘মজলুম শুধু আমাদের সংগঠন ছিল না। তারা ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের বিশাল সমাবেশে আঘাত দেয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বিএনপির ওপর, নির্যাতন করা হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ওপর। নির্যাতন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। হত্যা করা হয়েছে সাংবাদিক বন্ধুদের। কালো আইনে তাদের টেনে-হিচড়ে নেয়া হয়েছে জেলে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের জেলা আমির আহসান হাবীব মাসুদ। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ, টাঙ্গাইল শহর শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপিত মামুন আব্দুল্লাহ, শিবিরের জেলা সভাপতি আনোয়ার হোসেন মতিউল্লাহ, সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ একরামুল হক সজিবের পিতা জিয়াউল হক ও শহীদ আনাফ আবির আশরাফুল্লাহর বোন সৈয়দা আক্তার প্রমুখ।

এর আগে সকালে ডা. শফিকুর রহমান জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে