বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

এমপি হয়েই ২০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান মনসুর

রাজশাহী অফিস
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৪
ছবি-যায়যায়দিন

এমপি ছিলেন মাত্র এক মেয়াদ। সেই ৫ বছরে শুধুমাত্র এলাকায় নিয়োগ বাণিজ্য করেই শত কোটি টাকা কামানোর অভিযোগ রয়েছে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এখানেই শেষ নয়, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের নাম গড়ে তুলেছেন সম্পাদ। পাঁচ বছরে তিনি কিনেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৩৮ বিঘা কৃষি জমি ও পুকুর। নিজের নির্বাচনী এলাকায় ডাক্তার মুনসুরের দুর্নীতির অভিযোগ মুখে মুখে। নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা উপকমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. মনসুর রহমান ২০১৮ সালে নৌকার টিকিট নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। তবে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় ২০২৪ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন ডাক্তার মনসুর। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

ডাক্তার মনসুর রহমানের আগে ও পরে অর্থাৎ ২০০৮, ২০১৪ ও ২০২৪ সালে এ আসন থেকে তিনবার নৌকার টিকিট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. মনসুর রহমান মাত্র এক মেয়াদে এমপি থেকে অনেক সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে দেওয়া ডাক্তার মনসুরের হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৭ গুণ। ব্যাংকে গড়ে উঠেছে টাকার পাহাড়।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ডাক্তার মনসুর রহমান শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৬১ টাকা। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টাকা।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ডাক্তার মনসুরের হাতে এখন নগদ আছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৬২ টাকা। ব্যাংকে ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ১২৪ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র ছিল ৩৫ লাখ টাকার।

২০২৪ সালে তার হাতে নগদ ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ টাকা। ব্যাংকে ছিল ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার।

২০১৮ সালে ডাক্তার মনসুরের ঋণ ছিল ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১ টাকা। ২০২৪ সালে ঋণের পরিমাণ কমে হয়েছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়াও ২০১৮ সালে স্থাবর সম্পদ হিসেবে মনসুরের ৩০ লাখ টাকার জমি ছিল। পাঁচ বছরে তার নামে বেড়েছে সাড়ে ৩২ বিঘা কৃষিজমি ও ৬ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর। যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত জাতীয় সংস নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেও পরে সেটি ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে সরকার পরিবর্তেনর পর তার বিরুদ্ধে ফের তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমানের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী বার্ষিক আয় ছয় গুণের বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া তার সম্পদের পরিমাণ ২০০ গুণ বেড়েছে। শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখালেও তার সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে অভিযোগ রয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে