মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

হাছান মাহমুদ ও প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫২
ছবি : যায়যায়দিন

ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালত এই মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ৬টি নির্যাতনের ঘটনায় বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন প্রথম আলোর তৎকালীন রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি মো. ইব্রাহিম খলিল।

মামলায় ৬টি ঘটনায় ১০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন, ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, খালেদ মাহমুদ, এরশাদ মাহমুদ, তানভীর আজম ছিদ্দিকী, সাবেক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমান যুগ্ম সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। হাসান আলী, সাবেক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, চট্টগ্রাম।

মো. জসিম উদ্দিন, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, এম মঞ্জুর মোর্শেদ, সাবেক রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও বার্তা সম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহসিন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারি জিগারুল ইসলাম জিগারসহ ১০০ জন। এছাড়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত রাখা হয়।

আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার বাদিও পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট জমির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার বাদি ইব্রাহিম খলিল পেশায় একজন সাংবাদিক। দেশের কোন দল-মতের সাথে তিনি জড়িত নন। ২০০০ সাল থেকে রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম আলো পত্রিকায় তার কর্মজীবন শুরু হয়। সেই থেকে বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতায় সাধারণ নিরীহ ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাড়াতে গিয়ে উপরোক্ত দুষ্কৃতিকারী, সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, দখল ও চাঁদাবাজ প্রকৃতির জালিমদের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, বালু পাচার, মদ পাচার, কাঠ পাচার, অবৈধ ইটভাটা, চাঁদাবাজি, সরকারি ও মালিকানাধীন জমি জবরদখলের নিউজ করে শত্রুতে পরিণত হন।

যারা ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতা থেকে দুরে সরাতে তাকে দমন-পীড়ন, আর্থিক প্রলোভন, হামলা, মামলা, এমনকি একাধিকবার প্রাণে হত্যার চেষ্টা করে। সেই থেকে প্রাণ ভয়ে তিনি পরিবার নিয়ে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটায় সরকারি পাহাড়ে গণমানুষের কবরস্থান কেটে প্রবাসীর বসতঘরের জন্য পুকুর ভরাট করছিল। খবর পেয়ে ২০ নভেম্বর সংবাদ সংগ্রহের নিমিত্তে ঘটনাস্থলে গেলে সরফভাটার অভিযুক্তগণ প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল ও তার সাথে থাকা ক্যামেরা ম্যানকে আটক করে বেধড়ক মারধর করে।

এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও তৎকালীন ওসি মঞ্জুর মোর্শেদ মামলা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়েরের জন্য অভিযুক্ত তৎকালীরন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হুকুম আছে বলে হুমকি দেন। এর এক মাসের মাথায় রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের নিজ বসতঘরের চলাচলের রাস্তা দখল করে সেমিপাকা ঘর করেন ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আলী নুর। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাও। চলাচলের রাস্তা প্রতিবন্ধকতার সময় বাধা দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, মন্ত্রীর (ড. হাছান মাহমুদ) নির্দেশে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী তোমাকে রাঙ্গুনিয়া থেকে বিতাড়িত করতে বলেছে।

এরপর ২০১১ সালের ২৯ মে উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের বনগ্রাম মাহবুবুল আলম চাষী ফার্ম সংলগ্ন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের কাজে গেলে হত্যার উদ্দেশ্যে ইব্রাহিম খলিলসহ তিন সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী ও তার সহপাঠীরা। এ সময় দূর্বৃত্তরা ইব্রাহিম খলিলের হাতে থাকা মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। পরে অভিযুক্ত সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী মোবাইল নিয়ে আসলেও ক্যামেরা ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো চার দিন পর ইব্রাহিম খলিলসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় চাদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। প্রায় ৬ বছর পর ওই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত খারিজ করে দেন। এরপর ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মসজিদ মার্কেটের আওতায় সম্পূর্ণ বৈধভাবে নির্মিত দোকান ভাঙচুর করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় তৎকালীন ইউএনও তানভীর আজম ছিদ্দিকী, উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলীসহ অভিযুক্তগণ। তানভীর আজম ছিদ্দিকী বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত আছেন।

দোকান ভাঙার কাজে অংশ নেন ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মচারি হিসেবে পরিচিত জিগারুল ইসলাম জিগার, এনায়েতুর রহিম, মুজিবুল ইসলাম সরফি, এমরুল করিম রাশেদ, মাসুদ নাছির, মোহাম্মদ আলী, আকাশ আহমেদ, আব্বাস হোসাইন আফতাব ওরফে আব্বাস হোসেনসহ উপরোক্ত জালিমগণ।

এর আগের দিন ২ সেপ্টেম্বর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে উপরোক্ত অভিযুক্তগণ এই দোকানের কম্পিউটারসামগ্রী, ফটোকপিয়ার সামগ্রী, মোবাইল পার্টস সামগ্রী, মোটর সাইকেল, টেলিফোন সেট, ডিলার পণ্য, পার্শ্ববর্তি পালকি কমিউিনিটি সেন্টার মার্কেটের গুদামে রাখা ডিলার পণ্য, ভ্যানগাড়িসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। একই সময়ে নাছির উদ্দিন ও তার চাচা বদিউল আলম বাদি হয়ে সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুটি বানোয়াট মামলা দায়ের করেন।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩০ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘বিলবোর্ডে বনমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রচারণা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তৎকালীন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তার ভাই খালেদ মাহমুদ, এরশাদ মাহমুদসহ উপরেল্লোখিত দুস্কৃতিকারীরা। এর মধ্যে হাছান মাহমুদের অনুসারি মরিয়ম নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারি আলতাফ হোসেন ও তার ভাই ১০-১২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায়। আর এ কাজের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন হাছান মাহমুদ, তার ভাই খালেদ মাহমুদ ও ইউএনও তানভীর আজম ছিদ্দিকী।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে