রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

বিরাজনীতিকরণ রুখতে সতর্ক বিএনপি 

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৬
লগো

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকালের প্রায় দেড় দশক সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার বিএনপির বিরুদ্ধে একের পর এক নেতিবাচক প্রচারণার কারণে আবারও ১/১১ পরিস্থিতির মতো কিছু আশঙ্কা করছে দলটি। এর বাইরে দু-একটি রাজনৈতিক দলের উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং সেই সময়ের কুশীলব ও তাদের শুভাকাক্সক্ষীদের সন্দেহজনক বিচরণ দলটিতে এই শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। এ নিয়ে বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেমন আছে, তেমনি পরিস্থতি মোকবিলায় আছে বাড়তি সতর্কতা।

পাঁচ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানোর হচ্ছে বলে এরই মধ্যে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, এ কাজগুলো করা হচ্ছে আবার ১/১১-এর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে, বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা থেকে।

২০০৭ সালে ১/১১ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় রাজনৈতিক নেতাদের ধরপাকড়। দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হন। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। এ বছরই ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করে বিশেষ কারাগারে নেওয়া হয়।

এই সময় দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে। মাইনাস-টু ফর্মুলা তখন ছিল একটি বহুল আলোচিত বিষয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্নভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠে। দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলন রাজপথে নেমে আসে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ঘরোয়া রাজনীতিরও অনুমতি দেয়। এরপর ধীরে ধীরে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ অন্য রাজনৈতিক নেতারাও মুক্তি পান।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ১/১১ প্রেক্ষাপট আর বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য আছে। আওয়ামী লীগ বলতে গেলে রাজনীতির মাঠ থেকে একেবারে ছিটকে গেছে। কিন্তু প্রশাসনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের সুবিধাভোগীরা আছে এবং নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদের পেছন থেকে দু-একটি রাজনৈতিক দলও উস্কানি দিচ্ছে। অন্যদিকে ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারকে যারা বিরাজনীতিকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে তাদের অনেককে এখন সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে বিএনপির উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আছে। তবে বিএনপি বসে নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে পরিস্থিতি রাজনৈকিভাবে মোকাবিলা করার।

এই নেতা আরও বলেন, গত ১৬ বছরে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এখন বিএনপিকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। এর নেপথ্যে কারণ তো অবশ্যই আছে। বিএনপি তা শনাক্ত করার পাশাপাশি জনতানির্ভর দল জনগণ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।

বিএনপি সূত্রমতে, দলটি এখন দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটির বিরুদ্ধে যেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা মিথ্যা প্রমাণ করা এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে দলের নেতাকর্মীদের নিয়েজিত করা। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা।

সূত্রমতে, সতর্কতার অংশ হিসেবে সারাদেশে সংঘটিত নানা নৈরাজ্য, হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, দখল, চাঁদাবাজির ঘটনা থেকে দলকে দূরে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি। যারাই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ প্রায় শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এ কঠোর বার্তা দলের তৃণমূলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নৈরাজ্য প্রতিহত করতে জনসচেতনতার উদ্দেশে এলাকায় এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া দুষ্কৃতকারীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বেশ কিছু এলাকায় নেতাদের মোবাইল ফোন নম্বরসহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

দলের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-নির্বিশেষে যে কোনো বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো নিরাপদ রাখার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের নৈরাজ্য প্রতিহত করুন। কেউ দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। কোনো পরাজিত শক্তি কিংবা কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে চাইলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিন। যদি কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্রমতে, নেতাকর্মীদের অপকর্মে জড়ানোর বিষয়টি যেমন দেখভাল করা হচ্ছে, তেমনি জনস্বার্থে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী নিয়োজিত করা হয়েছে। বন্যার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের স্থানীয় পর্যায়ে গিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিন দেশের সব জায়গায়ই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। অনেকের পরিবারকে মাসিক সহয়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের বিএনপির নেতাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরির দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির কার্যক্রম অবহিত করছেন। আন্দোলনে বিএনপির ক্ষতির পরিসংখ্যানও দেওয়া হচ্ছে। শীর্ষ নেত্রীসহ দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ত্যাগের কথা জানানো হচ্ছে। পাশাপশি এ-ও বলা হচ্ছে, বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর কারণ হিসেবে তারা কি সন্দেহ করছেন।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে