থানায় এসে আ.লীগ নেতার ধমক, শিক্ষার্থীদের মামলায় পরে গ্রেপ্তার 

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৬

দিনাজপুর প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী আওয়ামী লীগের পুরাতন স্টাইলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানায় মামলা করতে এসে উল্টো বৈষম্য বিরতি ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার হয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে বোচাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে গ্রেফতারের সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলীর বাসাবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বোঝাগঞ্জ থানায় আসেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

একইসময় বোচাগঞ্জ থানায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় শিক্ষার্থীদের উপরে চড়াও হয়ে হুমকি দেন তিনি। মূহুর্তেই জড়ো হয় কয়েক’শ শিক্ষার্থী। ঘিরে ধরেন ওই উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী কে । শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের মৌখিক ঘোষনা দেন। পরে শিক্ষার্থীদের করা মামলায় থানা চত্ত্বরে গ্রেপ্তার হন উপজেলা চেয়ারম্যান।

 
এ ঘটনা গত শনিবার রাতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায়। ওই চেয়ারম্যানের নাম আফসার আলী। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারই প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

 বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষে দায়ের করা ওই মামলার বাদি হয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ হতে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী মিছিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অতর্কিত হামলা চালায়। মারপিট করে, গুম করে ফেলার হুমকি দেয় এবং মেয়েদের শ্লীলতাহানি ঘটায়। তাদের হুমকি ধামকিতে এলাকার কোন চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা পর‌্যন্ত নিতে পারেন নি শিক্ষার্থীরা।

 
এ মামলায় সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব আহমাদুল বাশারসহ ২৪জন এজাহারনামীয় আসামী ও অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৭০-৭৫জনকে। 

 শনিবারের ঘটনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোচাগঞ্জ পৌরশহরের এক বাসিন্দা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে পার্শ্ববর্তী এক উপজেলায় স্বপরিবারে আত্মগোপনে ছিলেন চেয়ারম্যানও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী। শনিবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে থানায় আসেন। বাড়ি ভাঙচুরের মামলা করতে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যেকটি মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত কার‌্যক্রম করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন এটা আওয়ামীলীগের দেশ না, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের মুখে এমন কথা শুনে তাদের উপরে চড়াও হন আফসার আলী, হুমকি দেন শিক্ষার্থীদের। মূহুর্তে শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দেওয়া শুরু করলে বাইরে থেকে আরও কিছু শিক্ষার্থীও সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি তুলেন। পরে হ্যানমাইক হাতে নিয়ে মৌখিক পদত্যাগের ঘোষনা দেন এবং সাত কার‌্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। এসময় বোচাগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দায়িত্বপালনকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান থানায় এসেছিলেন। এই সময় থানায় শিক্ষার্থীদের সাথে চেয়ারম্যানের কথা কাটাকাটি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিনি মৌখিক পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের দায়ের করা একটি মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

যাযাদি/ এস