রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

চট্টগ্রামে ৪ বাসে আগুনের নির্দেশদাতা শ্রমিক লীগ নেতা 

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৮
-ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলম। সরকারদলীয় সংগঠনের নেতা হওয়ায় তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পাশাপাশি বিআরটিসি বাস ডিপোর ঠিকাদারি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডীর খন্দকিয়া গ্রামের ইউসুফ কোম্পানির বাড়ির মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে আবদুল হালিম রুবেল নামে এক ঠিকাদারকে কুপিয়ে হত্যা করেন দিদার। বিআরটিসি বাসের টেন্ডার নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহত রুবেলের মা আনোয়ারা বেগম তাকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছিলেন। এ ছাড়াও নানা অপরাধে দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও কয়েকটি মামলা। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপসহ একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলমের সঙ্গে চার লাখ টাকার চুক্তিতে চট্টগ্রামে বিআরটিসি বাস ডিপোতে থাকা চারটি বাসে গত ২০ জুলাই রাত ১২টার দিকে আগুন ধরিয়ে দেন লেগুনাচালক সোহেল রানা (৪০)। আগুন দেওয়ার ঠিক ১০ ঘণ্টা আগে ৫০০ টাকা অগ্রিম পরিশোধও করেন ওই শ্রমিক লীগ নেতা। কথা ছিল বাকি টাকা দেওয়া হবে কাজ শেষে।

গত ২৩ জুলাই বিকালে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জুনাইদের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন সোহেল রানা। এর আগে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ২২ জুলাই সকালে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে পুলিশ লেগুনাচালক সোহেল রানাকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। পরে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে নতুনপাড়ার বালুছড়া এলাকা থেকে দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তারা দুইজনেই কারাগারে। দিদারের বিরুদ্ধে হত্যাসহ নানা অপরাধে আরও চারটি মামলা রয়েছে।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোহেল রানা জানান, তিনি চট্টগ্রাম হাটহাজারী রোডে লেগুনা চালাতেন। ১৫ দিন আগে তার লেগুনা চালনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েন। এ সময় দিদারুল আলমের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য যান। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারাদেশে কোটা নিয়ে সহিংস ঘটনার সময় শনিবার বেলা আড়াইটায় সোহেলকে বাস পোড়ানোর প্রস্তাব দেন দিদার। এ জন্য তাকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে জানান দিদার। নগদ হিসেবে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়।

দিদারুল আলম চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চিকনন্ডী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনার আলী সওদাগর বাড়ির মাহাবুবুল আলমের ছেলে। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি। আর বাসচালক সোহেল রানা লালমনিরহাটের বড়বাড়ি ইউনিয়নের জয়হরি গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে। সোহেল বর্তমানে নগরের বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন এলাকায় বসবাস করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহমত উল্লাহ বলেন, ঘটনার সময় বিআরটিসির ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা একটি বাসের সিটের ফোম ছিঁড়ে এতে ব্রেকের ওয়েল লাগিয়ে দিয়াশলাই দিয়ে চারটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেন সোহেল। এরপর দেয়াল টপকে পালিয়ে যান।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, সোহেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দিদারুল ও সোহেলকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। সোহেল পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিআরটিসি চট্টগ্রামের ম্যানেজার অপারেশন জুলফিকার আলী জানান, রাতের অন্ধকারে ডিপোর বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় প্রথমে সোহেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগুনে দুটি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। আর দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, দিদারুল আলম সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে ডিপোর বাসগুলোতে সুপারভাইজার দেওয়াসহ নানা প্রভাব বিস্তার করতেন। তিনি এখন আর সুবিধা করতে না পারায় এ ঘটনা ঘটাতে পারেন।

তবে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সফর আলী বলেন, দিদারুল আলম স্বঘোষিত নেতা। তিনি শ্রমিক লীগের কেউ নন। তিনি সংগঠনের নাম বিক্রি করে অপকর্ম করছেন। তিনি শ্রমিক লীগের পদধারী নেতা- তার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বিআরটিসি ডিপো অবস্থিত। সেখানে ৯৬টি সরকারি বাস রয়েছে। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা চারটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় বিআরটিসি ডিপো চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় গত রোববার মামলা করেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে