রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯
ছবি-যায়যায়দিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলমান চিরুনি অভিযানে সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও সারাদেশে কারফিউ বলবত আছে।

একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে সারাদেশের নিরাপত্তা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিজিবির ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে পরিকল্পিত নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে চলমান চিরুনি অভিযানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। চলমান অভিযানে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই নাশকতায় জড়িত। অন্য মামলা ছাড়াও নাশকতার ঘটনায় পুরনো মামলার আসামিও রয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার নাশকতার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও ধ্বংসযজ্ঞের পর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মোতাবেক পুলিশের ২৮১টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে নাশকতাকারীরা। এ ছাড়া থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ ২৩৫টি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার পর্যন্ত রাজধানীতে সহিংসতার ঘটনায় ১৩৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের হয়েছে। মোট ১৭টি থানায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা প্রায় ৫০০। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।

এদিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বেইলি রোড ও বসুন্ধরা এলাকা থেকে বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, দলটির কোষাধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান মিল্লাদ, কার্যনির্বাহী সদস্য তরিকুল ইসলামকেও মঙ্গলবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। তবে এ সময় তিনি অফিসে ছিলেন না।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে ৫০৫ জনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত অধিকাংশ জনকেই জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। বেশ কয়েকজনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। যদিও আদালতে প্রায় ৮০০ জনকে হাজির করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ জানান, নাশকতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অন্তত দেড়শ’ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকারীদের হামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিকভাবে ৬১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলটির বিভিন্ন শাখা এবং জামায়াত-শিবিরের একাংশের নেতাকর্মীরা বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, ডেটা সেন্টার, মেট্রোরেল, পুলিশ ট্রাফিক বক্স ও থানায় ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। গ্রেপ্তার বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তরিকুল আলমের সঙ্গে তারেক রহমানের যোগাযোগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনিই তারেক রহমানের কাছে আন্দোলনের যাবতীয় তথ্য পৌঁছে দিতেন।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক করতে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীজুড়ে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ে।

তিনি আরও জানান, যাত্রাবাড়ী-টিটিপাড়া বস্তি, কমলাপুর, মালিবাগ, মগবাজার, মতিঝিল, পল্টন, কশাকরাইল, শাহবাগ, ফার্মগেট, আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, মহাখালী, রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুর ১০-মিরপুর-১, আগারগাঁও, আমিনবাজার, গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পলাশী, বকশীবাজার, চানখারপুল, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, আসাদগেট, মোহম্মদপুর, বসিলা, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, লালবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং শাহজাহানপুর এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাশকতা সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে তথ্য এবং অপরাধীর নাশকতার সময়ের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। তথ্য দাতাদের আর্থিক পুরস্কার ছাড়াও তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য জানাতে হটলাইন চালু করা হয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে, ০১৩২০০০১২২২ ও ০১৩২০০০১২২৩।

বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরে নাশকতায় শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ সময় তিনি শহীদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘নাশকতাকারীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

নিহত তিন পুলিশ সদস্য পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া, ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই (নিরস্ত্র) মো. মোক্তাদির রহমান ও ডিএমপির প্রো-রক্ষা বিভাগের নায়েক মো. গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের হাতে নগদ অর্থসহ অন্যান্য অনুদান তুলে দেন আইজিপি। পরে পুলিশ প্রধান নিহত আনসার সদস্যের পরিবারকেও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতা ও দুষ্কৃতকারীদের তথ্য দিতে হটলাইন চালু করা হয়েছে। ০১৩২০১০১০১০ অথবা ০১৩২০২০২০২০ নম্বরে নাশকতাকারীদের তথ্য দিতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তথ্যদাতা বা দাতাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা ছাড়াও তাদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করার কথা জানানো হয়েছে।

বুধবার আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় নাশকতার ঘটনায় আদালতের মাধ্যমে গত পাঁচ দিনে এক হাজার ২৫৮ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। যার মধ্যে সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ আরও ৪৭৪ জনকে কারাগারে পাঠায়। গত ২২ জুলাই ৩৯৪ জন, ২১ জুলাই ১৮৮ জন, ২০ জুলাই ১৪২ জন এবং ১৯ জুলাই ৬০ আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ২৭ আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

রাজশাহী অফিস জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজশাহীতে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হাতবোমা বিস্ফোরণ ও পুলিশের কাজে বাধার ঘটনায় ১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরীর তিনটি থানায় সাতটি এবং জেলার আটটি থানায় ৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় বুধবার ভোর পর্যন্ত ২১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে মহানগরে ১০৮ জন ও জেলায় ১০৮ জন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম এবং জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, রাজশাহী নগরীর তিনটি থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় চারটি, মতিহার থানায় দুটি ও চন্দ্রিমা থানায় একটি। তিনি বলেন, ‘বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মহানগরীর ১২টি থানায় মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নাশকতার সাত মামলায় ১৫ জন। যাদের সবাই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে নাশকতার সাত মামলায় মোট ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।’

তিনি আরও জানান, গত ১৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে মামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর ও তাদের ১৫টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মতিহার থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু কাইয়ুম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ১৭ জুলাই উপাচার্যসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখা এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এই মামলায় ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, গত ১৮ জুলাই নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, হাতবোমার বিস্ফোরণ, আরডিএ মার্কেটের সামনে পুলিশের ওপর হামলা, হাতবোমার বিস্ফোরণ এবং মহিলা কলেজের সামনে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

১৯ জুলাই বিকালে মালোপাড়া এলাকায় বিএনপি

নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, হাতবোমার বিস্ফোরণের ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।

জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, হাতবোমার বিস্ফোরণ, আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জেলার আটটি থানায় ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি জানান, ৯টি মামলায় বুধবার ভোর পর্যন্ত ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার ভোর ৬টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে