নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, দোয়া কামনা

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৪, ১১:১৬

যাযাদি রিপোর্ট
-ফাইল ছবি

হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শুক্রবার গভীর রাতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ নিবিড় পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়েছে। এদিকে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করা হয়েছে। 

 বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেয়া হয়। বেগম জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ নিবিড় পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়েছে।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসিনসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা কয়েক দফা বৈঠকে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখার সময় মেডিকেল বোর্ডের একটি বৈঠক চলছিল। মেডিকেল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জোবায়েদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ। তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ম্যাডামের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক যা করণীয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তার মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ নিবিড়ভাবে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় পর্যবেক্ষণ করছেন।

এদিকে সিসিইউতে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক-নার্স ছাড়া সকলের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দলীয় প্রধানের কাছে যেতে না পারলেও তাকে দেখতে শনিবার সকাল থেকে হাসপতালের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুর দেড়টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং ডাক্তাররা এখন ভেতরে কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার দেশবাসীর কাছে দোয়া চান বিএনপি মহাসচিব। 

রোগ মুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া 
খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করে নয়াপল্টন জামে মসজিদে মিলাদ ও বিশেষ দোয়া করা হয়। বাদ জোহর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীরা মিলাদ ও দোয়ায় অংশ নেন। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, মাহবুবুল হক নান্নু, আমিনুল ইসলামসহ যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিছুর রহমান তালুকদার খোকনসহ নেতাকর্মীরা দোয়ায় অংশ নেন। 

প্রসঙ্গত, ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। সর্বশেষ গত ১ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান খালেদা জিয়া। সে সময় তার চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের পরামর্শে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একদিন পর ২ মে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে নিজ বাসায় ফেরেন তিনি। এর আগে গত ৩০ মার্চ এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। হাসপাতালের সিসিইউতে রেখে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন তিনি।

যাযাদি/ এস