বিএনপিতে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ 

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ১১:৫৯

যাযাদি ডেস্ক
লোগো

আপাতত কাউন্সিল করতে না পারলেও দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি উইংকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। বিগত সময়ে ত্যাগী ও সুবিধাভোগী উভয় পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে পদ পরিবর্তন করা হলেও এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনে ভূমিকা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংগঠনিক কাজে দক্ষতা, খূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সক্ষমতাসহ ইতিবাচক গুণাগুণকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সঙ্গত কারণে পদপ্রত্যাশীরা অন্যদের পিছু না ছুটে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের ভূমিকা জানান দিতে হাইকমান্ড ও তার ঘনিষ্ঠদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। 

আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা হয়েছে। গত ১১ মার্চ ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন মধ্যরাতে বিএনপির ঢাকার দুটিসহ (উত্তর ও দক্ষিণ), চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকার চার আঞ্চলিক কমিটি এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর গত শনিবার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীসহ নির্বাহী কমিটির ৪৫ পদে নেতৃত্ব পরিবর্তন করে বিএনপি। একইদিনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের (আংশিক পূর্ণাঙ্গ) কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

এদিকে, সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির কাউন্সিল না হওয়ায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন কাউন্সিল না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটিতে রদবদল আনায় আপাতত দলের কাউন্সিল হচ্ছে না- তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে।  

সূত্রমতে, চলমান রদবদলের ধারবাহিকতায় খুব শিগগিরই নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে আরও রদবদল আসতে পারে। দ্বিতীয় ধাপে ৩০-৩৫ জন নেতাকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে বর্তমান পাঁচটি পদ শূন্যপদে নতুন মুখ আসতে পারে।  তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপ মিলিয়ে দুই থেকে আড়াইশ’ পদে আসতে পারে রদবদল। 
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  বলেন, দলের নির্বাহী কমিটিতে কিছুশূন্য পদ পূরণ এবং কিছু পদে সমন্বয় করা হয়েছে। আগামীতে আরও রদবদল করা হবে কিনা, সেটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।

বিএনপি সূত্রমতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনার আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কমিটি ঘোষণা করার বিষয়টি দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না। 

দলীয় পদে রদবদল নিয়ে বিএনপিতে নানামুখী বক্তব্য আছে। কেউ বলছেন, গঠনতন্ত্রের দেওয়া ক্ষমতা মেনেই পদ পরিবর্তন করছেন হাইকমান্ড। আবার অনেকে বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নানা কারণে আপাতত কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন পদ পুনর্বিন্যাস করছেন। যেহেতু একই পদে কারোর বেশিদিন থাকার সুযোগ নেই, তাই পদোন্নতি দিয়ে সেই শূন্যপদে যোগ্যদের পদায়ন করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করা নেতারা নতুন করে বড় পদে আসছেন তা অনেকটা পরিষ্কার। কিন্তু হাইকমান্ডের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের আমলনামা পৌঁছাচ্ছে কিনা তা নিয়েও পদপত্যাশী অনেকের দুশ্চিন্তা আছে। এজন্য নানাভাবে হাইকমান্ড বা তার ঘনিষ্ঠদের কাছে তদবির করে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ লন্ডনে থাকা একটি চক্রের সদস্যদের কাছে সবেচেয়ে বেশি ধরনা দিচ্ছেন তারা। এর বাইরে দীর্ঘ ৯ বছর দেশের বাইরে থাকা তারেক রহমানের আস্থাভাজনদের মধ্যে অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও পদপ্রত্যাশী একটি বড় অংশ যোগোযোগ করছেন। ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে আন্দোলন সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের কাছে সবচেয়ে বেশি ছুটছেন পদপ্রত্যাশীরা। কারণ বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব থাকা বকুল দেশে থাকা নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী। 

এর বাইরে হাইকমান্ডের আস্থাভাজনদের কাছে যারা যেতে পারছেন না তাদের অনেকে নানাভাবে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের কারাবন্দি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মুক্তি চেয়ে পোস্টার, বিলবোর্ড করেছেন। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় এমন অনেক পোস্টার ও বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে। এসব প্রচারমাধ্যমে নিজেদের আন্দোলনের অবস্থান জানান দেওয়া চিত্রও থাকছে। অনেকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের সময় নিজেদের কর্মকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করছেন। এদিকে দল পুনর্গঠন ঘিরে আলোচনা, সমালোচনা, লবিং, তদবীর শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বশীল পর্যায়ের কোনো নেতা কিছু বলতে নারাজ। 


যাযাদি/ এসএম