মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

এই সরকারের আমলে হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরী হয়েছে: মির্জা ফখরুল

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০১ জুন ২০২৪, ২১:৫৭
ছবি-যায়যায়দিন

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটা বেনজীর, একটা আজিজ নয়, এই সরকার আমলে হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরী হয়েছে।

শনিবার (১ জুন) দুপুরে গাজীপুর চৌরাস্তায় সাগর সৈকত কনভেনশন হলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিলের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোঃ শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও সদর মেট্রো থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল ইসলাম, ড. অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান এলিচ, আব্দুস সালাম শামীম, আনোয়ারা বেগম, মাহবুবুব আলম শুক্কুর, ভিপি জয়নাল আবেদীন তালুকদার, সুরুজ আহমেদ, হুমায়ূন কবির রাজু, মহানগর কৃষকদলের সভাপতি আতাউর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা সাজিদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাীন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার বীনা প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে খবরের কাগজ খুললেই কি দেখেন আপনারা? দেখবেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। কখন করেছেন, যখন তিনি র‌্যাবের ডিজি ছিলেন, পুলিশের আইজিপি ছিলেন, তখন এতো সম্পদ তৈরী করেছেন। যার বেতন সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেশি হয়না, সেই লোকের এখন দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা সম্পদ। যখন এটা ফাঁস হয়ে গেল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সেংশান দিলো তারপর কিন্তু তাকে তারা আইজিপি করেছে এবং তাকে সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সরকারকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো তোমরা তো সব দুর্নীতি পরায়ন লোকগুলোকে, যারা মানুষের অধিকারকে খুন করেছে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে তাদের তোমরা পুরস্কৃত করছো। সুতরাং তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো। তখন তাদেও টনক নড়েছে। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে মামলা করিয়েছে। তলব করতে শুরু করেছে।

কিন্তু অবাক কান্ড এই বেনজীর মে মাসের ৪ তারিখে তার পুরোপরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছেন। কাগজে কলমে বলছে মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের যে একাউন্ট সেখান থেকে ৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ৬০ কোটি টাকাই নয় আরো অসংখ্য টাকা তুলে নিয়ে গেছে। বন্ধুগণ এরা কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? সরকার কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? তখন এটা হতে পাওে না। কিন্তু আমরা যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাই, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে আমাদেরকে দেড় ঘন্টা/দুই ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। আর তাকে (বেনজীর) জামাই আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তুলে দিয়েছে সে যেন দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, এটা গেল একজনের কথা, আরেকজনের কথা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ।

যার একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল আলজাজিরাতে। তিনি কিভাবে তার ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে পাসপোর্ট দিয়ে মিথ্যা পরিচয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা সেংশন দেয়ার পরে এখন তাদের টনক নড়েছে। এখন বলছে আমরা এখন তদন্ত করবো।

একটা বেনজির, একটা আজিজ নয় এ সরকার হাজার হাজার আজিজ আর বেনজির তৈরি করেছে। শূধু তাই নয় এ সরকার বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে বিচার চাইতে গিয়ে আমরা বিচার পাইনা।

কোন কোন লোকের হাইকের্ট থেকে তদন্ত বন্ধ কওে দেয়া হয়, কোন কোন লোকের মুক্তি হয়ে যায়, আমাদেও দলের প্রায় দুই হাজার মানুষকে বিভিন্ন মামলায় সাজা দিয়ে দিয়েছে। গাজীপুরেরও কয়েক হাজার লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাদেও কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে শহীদ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান থেকে। তিনি যুবক/তরুনদের জেগে ওঠার ও ইস্পাত দৃঢ় আন্দোলন গড়ে তোলার আহাবান জানিয়ে বলেন, আপনারা অন্যায় কোন কিছুর কাছে মাথা নোয়াবেন না। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব আমাদের যে পথ নির্দেশ করবেন সেই পথে চলে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ন্যায়ের রাষ্ট্র ও সত্যের একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাল্লাহ। এদিনে এই হউক আমাদেও শপথ ও প্রতিজ্ঞা।

তিনি আরো বলেন, আমরা যখন যুবক ছিলাম/তরুণ ছিলাম তখন আমরা দেশের জন্য লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। আমাদেও নেতাকে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আপনাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। আমাদেও ন্যায়ের পথের সংগ্রাম, ন্যায়ের পথের সংগ্রাম কখনও বৃথা যেতে পারে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় ছিল উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। তখন কারখানাগুলোতে ডাবল শিফট, তিন শিফটে উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সেই জিয়াউর রহমানকে এখন তারা বলেন, তিনি নাকি পাকিস্তানের চর ছিলেন। যে লোকটি স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে রেখে যুদ্ধে চলে গেলো তাকে তারা বলেন তিনি নাকি পাকিস্তানের চর ছিলেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি আরেকজনের কথা না বললে আন্দোলন, রাজনীতি মিথ্যা হয়ে যাবে। তিনি হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পরে সবাই ভেবেছিল এবার বিএনপি শেষ। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি শেষ, যার কোন ভবিষ্যত নাই। কিন্তু এই নেত্রী সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে এসিছিলেন। এসে তিনি জিয়ারউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী যে পতাকা সেই পতাকাকে হাতে তুলে নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে গণতন্ত্রেও আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করেছিলেন। তখন কারণ ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছিলেন এক স্বৈরাচারী সরকার। আর সেই খালেদা জিয়াকে আজকের আওয়ামীলীগ গৃহবন্দি করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে।

প্রধান অতিথি বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল সুপরিকল্পিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে। সেই জিয়ারউর রহমান ছিলেন এমন জাতীতাবাদী একজন নেতা, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে একটা লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন। সেই লক্ষটি কি? সেই লক্ষ্যটি হলো আমাদেও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে, এ দেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে, সেই লক্ষ্যটি কি ? এখানকার সমস্ত মানুষকে শিক্ষিত করে তাকে বিশে^র দরবারে প্রতিযোগিতা করতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ জাতিকে এতো উপরে ঠেলে তুলেছিলেন যে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধেও তাকে মধ্যস্ততা করতে ডাকা হয়েছিল।

তিনি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার সংগঠণ সার্ক তৈরি করেছিলেন। আজকে এই সরকারের ক্রীতদাসী মনোভাবের কারণে তারা আজ বন্ধুও হারাচ্ছে, আজকে তারা একটি দুইটি দেশের কাছে মাথা নত করেছে। আজকে এ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দূর্নীতি দু:শাসনে চরমভাবে এ দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে