লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল ২ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার দাবি

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৪

যাযাদি ডেস্ক
ছবি : যায়যায়দিন

 ৪০টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স-বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে আসন্ন কপ ২৯-এ নাগরিক সমাজের বক্তব্য ও বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি পজিশন পেপার উপস্থাপন করেছে। 

অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে সমঝোতা সম্মেলন ২৯-এর কাছে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে রাষ্ট্রসমূহকে আপডেটেড এনডিসি-৩ প্রণয়নে একটি স্বচ্ছ এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত প্রণয়নের দাবি করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে স্বল্পউন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের এনডিসি-৩ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যথাযথ আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে হবে। সকল দেশের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধে একটি নির্ধারিত সময়সীমা (ফেজ-আউট টাইমলাইন) নির্ধারণের দাবি করা হয়েছে। 

এছাড়া জাস্ট ট্রানজিশনের ব্যবস্থাপনা নীতিমালা (ম্যানেজমেন্ট পলিসি) এবং স্বচ্ছ সংজ্ঞায়নের দাবি জানানো হয়েছে। অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে ক্লাইমেট ফাইনান্সিং-এর সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং বর্ধিত নতুন অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা (নিউ অ্যান্ড অ্যাডিশনাল ফান্ডিং টার্গেট) নির্ধারণ, এবং জলবায়ু অর্থায়নে অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা এবং উন্নয়নশীল, দরিদ্র ও অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজনের কথা সর্বাগ্রে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মানবাধিকারের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ এবং একটি নীতি কাঠামো প্রণয়নে বৈশ্বিক গবেষণা (গ্লোবাল রিসার্চ) কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানানো হয়েছে। 

অ্যালায়েন্সটির সমন্বয়কারী এবং সিপিআরডি-এর প্রধান নির্বাহী জনাব মো: শামসুদ্দোহা অ্যালায়েন্সটির পক্ষ থেকে দাবিসমূহ উপস্থাপন এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি আসন্ন সমঝোতা সম্মেলন ২৯-এর বিভিন্ন এজেন্ডার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, আগামী ১১ থেকে ২২ নভেম্বর ২০২৪, আজারবাইজানের বাকু শহরে কপ ২৯-এর সমঝোতা সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে পূর্ববর্তী সম্মেলনের ধারাবাহিকতায়। 

আমরা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং সমঝোতা সম্মেলনের বিভিন্ন চুক্তিগুলো বাস্তবায়নে বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত চাই (ইনফোর্সেবল আউটকামস)। তিনি বৈশ্বিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের স্থলে প্রয়োজন ভিত্তিক এবং ক্ষয়ক্ষতির আলোকে নতুন বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রার দাবি করেন। এছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে এবং মানসম্মত অর্থায়নের দাবি জানান।  ব্যাপক পর্যবেক্ষণ, রিপোর্টিং মডেল তৈরির এবং স্বতন্ত্র অর্থ সংস্থানের (ইনডিপেন্ডেন্ট ফান্ডিং) তিনি দাবি করেন। 

জনাব মো: শামসুদ্দোহা আরও বলেন, আন্তঃসীমান্ত অভিযোজন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তথ্য বিনিময়, দক্ষতা বৃদ্ধি, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগপূর্ব সতর্কবার্তা আদান-প্রদানের উপর তাগিদ দেন। তিনি বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে (গোল অফ গ্লোবাল অ্যাডাপ্টেশন) একটি নীতি কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করেন যেটি আন্তঃসীমান্ত অভিযোজন কার্যক্রমের সমন্বয়করণে সহযোগিতা করবে; এ বিষয়ে তিনি ‘ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি’ ও ‘ইয়েলো রিভার কমিশন’ এর উদাহরণ দেন। এছাড়া তিনি জেন্ডার রেসপন্সিভ জলবায়ু অ্যাকশন পরিকল্পনা তৈরিকরণ এবং স্বতন্ত্র জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সংজ্ঞা, স্বতন্ত্র নীতি কাঠামো প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।

জনাব তালহা জামাল, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সিপিআরডির নেতৃত্বে ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স-বাংলাদেশ’ সেই দায়িত্বশীল ভূমিকাটিই পালন করছে। অ্যালায়েন্সের অবস্থানপত্রটির মাধ্যমে আপনারা যে দাবি এবং প্রস্তাবনাগুলো উপস্থাপন করেছেন সেগুলোকে আমি সমর্থন করি। বিভিন্ন পক্ষ হতে যে প্রস্তাবনাগুলো এসেছে সেগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানিয়েছেন। 

শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, শুরুতেই সিপিআরডি’কে ধন্যবাদ জানান নাগরিক সমাজকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের কাজগুলো অব্যাহত রাখার জন্য। 

তিনি আরও বলেন, বহু জাতিক এবং বহু পাক্ষিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বেসরকারি মুনাফা-কেন্দ্রিক ঋণকেন্দ্রিক অর্থ লগ্নির পরিবর্তে জলবায়ু বিপদাপন্ন মানুষ এবং দেশের জন্য অভিযোজন, প্রশমন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার দাবি জানান।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনাব শরীফ জামিল, সাধারণ সম্পাদক, ধরা ও কেন্দ্রিয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য, ওয়াটার কিপার এলাইয়েন্স; মিসেস হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর ওয়াটারএইড বাংলাদেশ; জুলিয়েট কেয়া মালাকার, নির্বাহী পরিচালক; সিসিডিবি; ডাঃ এ.কে.এম. সাইফুল ইসলাম, বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক; মিস রাবেয়া বেগম, নির্বাহী পরিচালক, এসডিএস; জনাব প্রশান্ত ভার্মা, কান্ট্রি ডিরেক্টর, হেলভেটাস, বাংলাদেশ; এছাড়া নাগরিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের নীতিনির্ধারনী ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত থেকে মতামত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে পজিশন পেপার তৈরি করণ প্রক্রিয়ার উপর একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জনাব আদনান ইবনে আদবুল কাদের, জলবায়ু ও জল শাসন বিশেষজ্ঞ, ওয়াটার এইড। নাগরিক সমাজের পজিশন পেপারে নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন শেখ নুর আতায়া রাব্বি, অ্যাসিস্ট ম্যানেজার- সিপিআরডি।

যাযাদি/ এম