বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

‘জুলাই বিপ্লব’ থেকে মে দিবস ২০২৫: বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের পথে কতদূর এগোলাম?

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:২১
‘জুলাই বিপ্লব’ থেকে মে দিবস ২০২৫: বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের পথে কতদূর এগোলাম?
ছবি: যায়যায়দিন

২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’ ছিল একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ, যেখানে সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী জনতা, তরুণ প্রজন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সর্বব্যাপী বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি ছিল একটি সমাজ-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে জাতীয় চেতনায় উত্থান। সেই প্রেক্ষাপটে, ২০২৫ সালের মে দিবসে এসে আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে—এই বিপ্লবের আমরা কতটা ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি?

‘জুলাই বিপ্লব’—বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ

এই বিপ্লবের মূল দাবি ছিল—

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা

রাষ্ট্রীয় সম্পদের ন্যায্য বণ্টন

শিক্ষায় সমান সুযোগ

বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা

পুঁজিবাদী দখলদারিত্ব ও দুর্নীতির অবসান

জাতি সেই সময়ে দেখেছে কীভাবে সরকারি চাকরিতে অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য, শিক্ষাখাতে শহর-গ্রাম বিভাজন, এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধনীদের আধিপত্য রাষ্ট্রকে প্রতিদিনই অমানবিক করে তুলেছে। এই বিপ্লব একটি বার্তা দিয়েছে—শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রের চরিত্র বদল জরুরি।

মে দিবস ২০২৫: কেবল স্মারক, না কি প্রতিশ্রুতির হিসাবের দিন?

মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতির দিন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি কেবল ছুটির দিনে সীমাবদ্ধ থেকে গেলে হবে না।

আমরা দেখতে চাই—

শ্রমিকরা কি ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন?

গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকেরা কি চাকরি হারানোর ভয়ে আন্দোলন করতে পারছেন না?

অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করা কোটি মানুষ কি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ পাচ্ছেন?

রাষ্ট্র কি এখনো সেই পুরনো ক্ষমতাকাঠামোর শাসনে?

জুলাই বিপ্লবের প্রাপ্তি ও সীমাবদ্ধতা

অবশ্যই, ‘জুলাই বিপ্লব’ দেশের রাজনৈতিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে, তা প্রমাণ করে দেশের যুবসমাজ এখন আর নিরব দর্শক নয়।

তবে—

এই বিপ্লবের রাজনৈতিক প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়

ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি

একীভূত নেতৃত্বের অভাবে গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতা দুর্বল হয়েছে

সামনের পথ: প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নতুন সমাজচুক্তি

জুলাই বিপ্লব আমাদের দেখিয়েছে, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আছে। মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই পরিবর্তনের মূল শক্তি শ্রমজীবী মানুষ।

সুতরাং, আমাদের প্রয়াস হওয়া উচিত—

একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ

প্রশাসনে দলীয়করণ ও বৈষম্যের অবসান

উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের যথাযথ সম্মান ও অংশীদারিত্ব

উপসংহার

জুলাই বিপ্লব ছিল জাতির বিবেকের জাগরণ। মে দিবস হচ্ছে সেই জাগরণের বাস্তবায়নের দিন। আমাদের মনে রাখতে হবে—শুধু বক্তব্য নয়, বাস্তব ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই একটি সফল বিপ্লবের মাপকাঠি।

এখনও দেরি হয়নি। চলুন, রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আমরা একত্রিত হই।

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে