নেতৃত্ব জন্মগত নয়, গঠিত হয় অধ্যবসায়ে

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৯

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
ছবি: যায়যায়দিন

নেতৃত্ব একটি চর্চার বিষয়—এটি কাউকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় না, আবার কেবল রক্তের উত্তরাধিকারেও আসে না। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই নেতৃত্বের বীজ লুকানো থাকে। কেউ তা কাজে লাগাতে পারে, কেউ পারে না। কিন্তু যিনি পারেন, তিনিই নিজেকে অন্যদের মধ্যে আলাদা করে তোলেন।

প্রাচীনকালে নেতা মানেই ছিল রাজপরিবারের কেউ, কিংবা সমাজের উচ্চবর্ণের কেউ। ‘Leaders are born, not made’—এই ধারণাটি তখনকার সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের দেখিয়েছে, সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরাও আজ নেতৃত্বে আসছে। এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে একটি নতুন বিশ্বাস: ‘Leaders are made, not born.’

আমরা যারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, যারা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সম্ভাবনা দেখি, তারা জানি—এই নেতৃত্ব তৈরি করে নিতে হয়। প্রশ্নটি এখন এমনভাবে উঠে আসে: আমি কীভাবে নিজেকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি পাঁচটি দিক চিহ্নিত করেছি—যেগুলো চর্চা করলে একজন মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে একজন আত্মবিশ্বাসী, সহানুভূতিশীল এবং কার্যকর নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

১. শিখতে দ্বিধা করো না  

নেতৃত্ব মানে সব জানি এমন ভান করা নয়, বরং শিখে যাওয়ার মানসিকতা রাখা। আমি নিজেও শিখছি—মানুষের কাছ থেকে, সমাজের অভিজ্ঞতা থেকে, ব্যর্থতা থেকে। যে শেখে, সে নেতৃত্ব দিতে পারে। কারণ সে বুঝে, অনুভব করে, বিবেচনা করে।

২. মানুষকে বুঝতে পারা  

একজন নেতা শুধু আদেশ করেন না, বোঝেন। কার কেমন মানসিক অবস্থা, কে কোন কাজে পারদর্শী, কার মধ্যে কী সুপ্ত প্রতিভা আছে—এই বোঝাপড়া থেকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আস্থা তৈরি হয়।  

৩. অন্যদের সামর্থ্য ও দুর্বলতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করা  

আমি বিশ্বাস করি, নেতৃত্ব মানে হলো অন্যকে আলোয় আনা। যারা আমার সঙ্গে কাজ করছেন, তাদের সক্ষমতা খুঁজে বের করে তাদের সামনে তুলে ধরা, এবং তাদের দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করার পথ দেখানো—এটাই একজন নেতার অন্যতম দায়িত্ব।

৪. চিন্তাকে বহুমাত্রিক করা  

একটি বিষয় একভাবে দেখলেই সব বোঝা যায় না। নেতাকে হতে হয় বিশ্লেষণী, ধৈর্যশীল এবং চিন্তায় গভীর। কোন পরিস্থিতির পেছনে কী কারণ, কোন সিদ্ধান্তের কী ফল হতে পারে—এগুলো নিয়ে চিন্তা করাই নেতৃত্বের অন্যতম চর্চা।

৫. নতুন কিছু করতে সাহস করা  

নেতা মানে পথপ্রদর্শক। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি প্রচলিত পথে না হেঁটে, কীভাবে আরও ভালো কিছু করা যায় সেই চিন্তা করতে। পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে বরং আলিঙ্গন করাই একজন নেতার প্রগতি চেতনার প্রমাণ।


আমার অভিজ্ঞতা বলছে, নেতৃত্ব মানে শুধু মিছিল-মিটিং নয়। এটি অফিসেও লাগে, পরিবারেও, সমাজেও। যে কোনো জায়গায় যখন তুমি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাও, তখনই তুমি নেতা।  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র একটি চিন্তাশীল, গবেষণামূলক এবং দায়িত্বশীল তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি চাই এই প্রতিষ্ঠানটি এমন এক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক, যেখানে তরুণরা শুধু তাত্ত্বিক নয়, বাস্তবমুখী নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হবে।

নেতৃত্ব অর্জনের এই যাত্রা সবার জন্য উন্মুক্ত—শুধু প্রয়োজন একটু সাহস, একটু চর্চা, আর একটা বিশ্বাস: *“আমিও পারি।”*  


লেখক পরিচিতি:

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র  
(প্রাক্তন প্রকৌশলী, সমাজ চিন্তক, ও গবেষক—বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন ও নেতৃত্ব বিকাশ নিয়ে কাজ করছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে।)