ফ্যাসিবাদ আমাদের সামাজিক জীবনে: ভিন্নমতের স্বাধীনতা কোথায়?
প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৬
ফ্যাসিবাদ বলতে আমরা সাধারণত রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক কাঠামোয় একক নেতৃত্ব ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের কথা বুঝি। তবে, এটি শুধু রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই সীমাবদ্ধ নয়। আজ আমাদের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কেও এই ফ্যাসিবাদ চর্চা প্রবল হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি কারও মনের মতো পোস্ট না দেন, তাহলে গালি, ট্যাগ কিংবা আরও বড় হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি শুধু যে অনলাইনে ঘটছে তা নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন সামাজিক সম্পর্কেও ভিন্নমত প্রকাশে অনেক সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
একটি গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি কোনো শক্তিশালী গোষ্ঠীর বিপরীতে মত প্রকাশ করে, তাহলে তাকে নানাভাবে অপমানিত বা হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মত প্রকাশের কারণে কেউ "শত্রু" হয়ে যেতে পারে—এমন পরিস্থিতি আমাদের সমাজকে বিপথগামী করছে।
আজ যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা তাঁদের প্রভাব দিয়ে মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান। আর যাঁরা ক্ষমতাহীন, তাঁদের অনেক সময় নিজের মত প্রকাশের জায়গাই থাকে না।
আমাদের প্রথমেই সহনশীলতার চর্চা করতে হবে। ভিন্নমতকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
১. মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করুন: ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা।
২. সহনশীলতার চর্চা: ভিন্নমত থাকা মানে শত্রুতা নয়, বরং উন্নত ও চিন্তাশীল সমাজ গঠনের একটি অংশ।
৩. নির্ভীকতা: সত্য প্রকাশে সাহস দেখানো এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
৪. আলোচনা ও সংলাপ: বিতর্কের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায়। এখানে একমত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং যুক্তি ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে আলোচনা হওয়া জরুরি।
আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদের যে প্রবণতা বেড়ে চলেছে, তা কেবলমাত্র সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রতিহত করা সম্ভব। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে চললে আমরা একটি মানবিক ও সহনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
লেখক পরিচিতি : সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
যাযাদি/ এস