রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী: এক অবিস্মরণীয় সংগ্রামী’

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৪
ছবি : মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

আজ ১৭ নভেম্বর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে, যখন এই নেতা আমাদের মাঝে আর থাকলেন না। তাঁর মৃত্যু গোটা জাতিকে এক গভীর শোক সাগরে ভাসিয়ে দেয় এবং উপমহাদেশের একজন অন্যতম রাজনৈতিক সূর্য নিভে যায়।

মাওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলার মজলুম জননেতা, যিনি সারাজীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের এক অনন্য মিশ্রণ তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, যা তাঁকে একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি কখনোই আপোষ করেননি, বরং নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, জমিদারদের নির্যাতন এবং পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম ছিল ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শের মিশ্রণে একটি রাজনৈতিক দল, ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি)।

শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরুও ছিলেন মাওলানা ভাসানী। তাঁরা একসাথে মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অগ্রসর হয়েছিলেন। ভাসানী তার জীবনে বারবার জেল, জুলুম এবং অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তবে একটানা সংগ্রামে কখনো পিছু হটেননি।

আজ, মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা স্মরণ করি তাঁর অবদান এবং সংগ্রামের ইতিহাস। তিনি ছিলেন এক মহান নেতা, যিনি আজও প্রেরণার উৎস। পৃথিবীর নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে গবেষণা চলছে, যা প্রমাণ করে তাঁর অবদান কতটা গভীর ও বিশাল।

মাওলানা ভাসানী শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক দিকনির্দেশক, এক সংগ্রামী মহাপুরুষ, যিনি মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন বাজি রেখেছিলেন। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম আমাদের শেখায়, কীভাবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়।

মাওলানা ভাসানী চিরকাল আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন, তাঁর আদর্শ, তাঁর সংগ্রাম ও তাঁর মুক্তিযুদ্ধের পথিকৃৎ হিসেবে।

লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে