শফিকুর রহমানের বক্তব্যে জামায়াতের অভ্যন্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:১৯ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৪
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়া, ছাত্রলীগে যুক্ত থাকার স্মৃতিচারণ, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন, ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দ ব্যবহারে অনাগ্রহ, এবং মৌলবাদ থেকে দূরত্বের ঘোষণা দেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমি আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অতীতে আমি ছাত্রলীগ করতাম, কিন্তু এখন আমি একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে কাজ করতে চাই। আনুপাতিক নির্বাচন চাই কারণ এটি সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ফ্যাসিস্ট বলতে আমার ভালো লাগে না। রাজনীতিতে সহনশীলতার প্রয়োজন। আর আমি মৌলবাদী নই, বরং একটি প্রগতিশীল ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করি।”
তাঁর এই বক্তব্যগুলো দলের অভ্যন্তরে এবং বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জামায়াতের একটি অংশ এটিকে দলের ভাবমূর্তি সংস্কারের প্রয়াস হিসেবে দেখলেও, অন্য একটি অংশ নেতার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে।
অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের উদাহরণ?
জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মী এই বক্তব্যকে নেতার ব্যক্তিগত মতামত বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলেন, “আমাদের দলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা আমীরের বক্তব্যের সাথে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু এটি দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রেরই প্রমাণ।”
তবে দলীয়ভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না আসায় এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমীরের এমন বক্তব্য দলের দীর্ঘদিনের কৌশল ও অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে শিগগিরই দলের অভ্যন্তরে আলোচনা হবে।”
রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে একটি মধ্যপন্থী ইমেজ তৈরি করতে চান। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি দলকে নতুনভাবে সাজানোর প্রয়াস হতে পারে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যে দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে। কারণ জামায়াতের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধী শক্তির সাথে আপসের কৌশলকে সমর্থন করে না।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা এই বক্তব্যকে তাঁদের নীতি ও কৌশলের সাফল্য বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির একটি অংশ মনে করছে, জামায়াতের এই অবস্থান তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং বিপ্লবী ছাত্র-জনতার চেতনার সাথে দলীয় নেতার বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সামনের পথ
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের বাস্তবায়ন এবং দলের অভ্যন্তরে ঐক্য বজায় রাখা জামায়াতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন বক্তব্যের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
যাযাদি/এসএস