লালন শাহ: অসীম জীবনের খাঁচায় অচিন পাখি
প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৭
ফকির লালন শাহ, যিনি ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর আমাদের ছেড়ে চলে যান, তাঁর জীবন ও দর্শন বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক অনন্য রত্ন। তাঁর রচিত অসংখ্য গানের মধ্যে বিশেষ এক অনুভূতি মূর্ত হয়ে ওঠে, যেখানে তিনি মানুষের আত্মিক খাঁচায় বসবাসরত এক অচেনা পাখির কথা বলেছেন। এই পাখি জীবনের রহস্যময় অস্তিত্বের প্রতীক, যার আচরণ ও উপস্থিতি আমাদের গভীরভাবে ভাবায়।
লালনের গান "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি" বাংলা সংস্কৃতির গভীরে একটি অমূল্য সম্পদ। তাঁর গান শুধুমাত্র সুরের চমৎকারিত্বে নয়, বরং আত্মজিজ্ঞাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আট কুঠুরি নয় দরজা বিশিষ্ট খাঁচা, যেটি মানুষ নিজে ধারণ করে, সেই রহস্যময় কাঠামোর প্রতিফলন আমাদের জীবনের বাস্তব ও পরাবাস্তব দিকগুলোকে তুলে ধরে।
লালনের ধর্মবিশ্বাস: অজানা ও বহুরূপী
লালন শাহের ধর্মবিশ্বাস সবসময়ই মানুষের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। কেউ কেউ তাঁকে হিন্দু হিসেবে দেখেছেন, আবার কেউ মুসলিম। তবে লালন নিজেই তাঁর গানে বলেছিলেন, "সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে," যা তাঁর জাত-ধর্মের ধারণাকে অস্বীকার করার এক শক্তিশালী বার্তা। তিনি সব ধর্মের প্রতি এক উদার দৃষ্টিভঙ্গি রেখে মানুষের আত্মিক মুক্তি ও ঐক্যের গান গেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক স্তরে লালন: ক্যারল সলোমনের অবদান
লালন শাহের গানের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ ক্রমাগত বেড়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক ক্যারল সলোমনের দীর্ঘদিনের সাধনা লালনের গানের ইংরেজি অনুবাদ ও গবেষণার মাধ্যমে আমাদের সামনে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। তিনি খোদা বক্সের মতো গবেষকের সঙ্গে কাজ করে লালনের গানের আদি রূপ উন্মোচনে অবদান রেখেছেন। যদিও ২০০৯ সালের এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়, তাঁর কাজ লালনের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
লালনের গান, বিশেষত "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি" আজও আমাদের মনে প্রশ্ন ও ভাবনা জাগায়। তাঁর গানের মাধ্যমে তিনি মানুষের অন্তরাত্মার মুক্তির বার্তা দিয়েছেন, যা স্থানীয়ভাবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সম্মানিত হয়েছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এবং বিদেশি গবেষকদের আগ্রহ প্রমাণ করে যে লালনের গান যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে আলোড়ন তুলে যাবে।
ফকির লালনের উত্তরাধিকার শুধু গানেই নয়, বরং মানবজাতির প্রতি ভালোবাসা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এক আলোকিত পথ দেখিয়েছে।
লেখক : কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ।
যাযাদি/ এসএম