রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শ্রমিক-কৃষকের নামে বিভ্রান্ত রাজনীতি: সত্যিকারের শত্রু কারা?

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৯
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম

রাজনীতির ময়দানে মতাদর্শিক পরিচয় ও অবস্থান স্পষ্ট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর অবস্থান পরিষ্কার হয়, তখন জনগণ বুঝতে পারে কীভাবে তাঁকে মোকাবিলা করতে হবে বা তাঁর চিন্তার বিরুদ্ধে যুক্তি তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর পরিচয় নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানবিহীন নেতারা দেশ ও জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থে কতটা ক্ষতিকর, তা বোঝা সহজ নয়।

পিয়াল, নিঝুম মজুমদার এবং ফারজানা রূপা তাঁদের অবস্থান আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হলেও তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক বয়ান নিয়ে স্পষ্ট। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় খোলামেলা এবং তাঁদের চিন্তা বা বক্তব্যের বিপরীতে মতামত দেওয়া সহজ। এদের বিরুদ্ধে জনমানুষ বা বিরোধী দল নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে কারণ তারা জানে কাদের সঙ্গে কীভাবে ডিল করতে হবে।

তবে বিপদ তখনই আসে যখন কিছু ব্যক্তি নিজেদের মার্কসবাদী বলে পরিচয় দেন, কিন্তু বাস্তবে মার্কসবাদের তাত্ত্বিক ও বাস্তবিক ভিত্তি থেকে তাঁরা বিচ্যুত। রুহিন হোসেন প্রিন্স ও মঞ্জরুল হক এই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁরা মার্কসবাদীদের ধ্বজা তুলে জনমানুষের স্বার্থের বিপরীতে রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে—তাহলে এই মার্কসবাদীরা প্রকৃতপক্ষে কাদের রাজনীতি করছে? তাঁরা শ্রমিক-কৃষকের রাজনীতির নামে আওয়ামী লীগের শাসনকেই বৈধতা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যে শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে, তা এরা একপ্রকার ন্যায্যতা দিচ্ছে নিজেদের ভ্রান্ত রাজনৈতিক তত্ত্ব দিয়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এদের দ্বারা কোনো গণমানুষের প্রতিনিধি সৃষ্টির সুযোগ নেই। এরা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে না, ফলে জনমানুষের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এবং তাদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাও নেই।

বিশেষ করে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসন এবং আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো দমন-পীড়নের ঘটনাকে এরা মৌলবাদী চক্রান্ত বা আমেরিকার ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করে। অথচ, এই শাসন ২০০০ জন শহীদ, ১১ হাজার নিখোঁজ এবং ৩৩ হাজার আহতের একটি ভয়াবহ চিত্র তৈরি করেছে। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে প্রশ্ন ওঠে—এদের গণমানুষের শত্রু বলে অভিহিত করা যায় না কেন?

আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত এই বিভ্রান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মুখোশ উন্মোচন করা। জনমানুষের আসল চাহিদা ও তাদের সমস্যার প্রতি দায়বদ্ধতার সঙ্গে রাজনীতি করতে হবে। বিভ্রান্তি ও ভুল বর্ণনা নয়, বরং বাস্তব সমাধান ও সঠিক পথনির্দেশনা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

সাংবাদিকের সুপারিশ:

রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্টতা এবং সততা থাকতে হবে।

বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

জনমানুষের প্রকৃত দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করা জরুরি।

শ্রমিক-কৃষকের নামে ভুল রাজনৈতিক প্রচারণাকে চিহ্নিত করে এর সমাধান খুঁজতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তির বিপরীতে সঠিক ও সাহসী নেতৃত্বের প্রয়োজন। শ্রমিক-কৃষকের রাজনীতির নামে যারা জনমানুষের শত্রু, তাঁদের চিনে, সঠিক অবস্থান নিতে হবে।

লেখক : কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে