এলএনজি আমদানিতে বকেয়া পরিশোধের চাপ বাড়ছে
বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার
প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বকেয়া পরিশোধের চাপ বেড়েই চলছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের বকেয়া পরিশোধ করা গেলেও আমদানি করা তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও দেশীয় গ্যাস সরবরাহকারীদের বিপুল বকেয়া জমা পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ না হলে ব্যাহত হতে পারে নতুন বছরের আমদানি ও উত্তোলন কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রিতে এখাতে বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এছাড়া ডলার সংকটের প্রভাবও রয়েছে। পেট্রোবাংলা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত এখাতে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে এলএনজি আমদানি বাবদ কাতারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম কোম্পানি কাতার এনার্জি ও মার্কিন গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি শেভরনসহ অন্যদের বকেয়া প্রায় ১৬৭ মিলিয়ন ডলার এবং বাকি ১৮১ মিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (আইওসি)।
তবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের দৈনিক জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বকেয়া বিল পরিশোধ এবং এলএনজি আমদানি করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে তহবিল চাওয়া হয়েছে। যেহেতু স্থানীয় উৎপাদনে শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে না তাই এলএনজি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। কর্মকর্তারা আশা করছেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
এদিকে সরকার উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করে কম দামে ভোক্তাদের সরবরাহ করে থাকে। যা প্রতি বছর রাষ্ট্রের এখাতে ব্যয় বাড়িয়ে তুলছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স¤প্রতি এলএনজি আমদানির জন্য পূর্বের বকেয়া পরিশোধের ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এর আগেও এলএনজি বয়েকয়া পরিশোধে চলতি বছরের শুরুতে ২ হাজার কোটি টাকা তহবিল দিয়েছিল অর্থ বিভাগ।
এদিকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও ২০২৫-২৬ সালে তা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে পৌঁছাবে। কিন্তু দেশে উৎপাদন রয়েছে ২ হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে শতভাগ চাহিদা পূরণ করতে আরও প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি বা উত্তোলনের প্রয়োজন পড়বে। আর এলএনজি আমদানির মাধ্যমেই গ্যাসের এই ঘাটতি বড় অংশ পূরণ করতে হবে। তবে এখাতে সরকারকে মোটা অংকের ভর্তুকি দিতে হবে।
যার মধ্যে কেবল এলএনজি আমদানিতেই প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের শিল্পসহ বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিতে আমদানির বিকল্প খুব একটা নেই। অন্যদিকে নতুন বছরে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে গাড়িতে সিএনজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা এবং বাসাবাড়িতে গ্যাস না দিয়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আগামী বছরে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে বলেও ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন। সে ক্ষেত্রে বিপুল বকেয়া ও আমদানি বাবদ অর্থের জোগানই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেখা গেছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন কমেছে ৩০-৩৫ শতাংশ, স্টিল ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন কমেছে ২৫-৩০ শতাংশ, সিরামিক উৎপাদন কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি এবং প্রায় ৪০ শতাংশ এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। তবে তা করতে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে হবে, যার মধ্যে ৫৬ কার্গো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় পাওয়া যেতে পারে। বাকিটা গ্যাস স্পট মার্কেট থেকে কিনতে হবে। তবে নতুন বছরের শেষ দিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ হাজার ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সরকার অনুমোদ দিলে ২-৩ মাসের মধ্যে কূপ খননের কার্যক্রম শুরু হবে।
যাযাদি/ এসএম