গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর অগাস্টের ৮ তারিখ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাকে তাদের অগ্রাধিকার হিসেবে ঠিক করেছে। পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন করার লক্ষ্যেও এ সরকার কাজ করছে।
এই সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বেশকিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হওয়ার পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক প্রবণতাও, দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে অংশীজনের মধ্যে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কি ভাবছেন দেশের নাগরিকরা এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাদেশব্যাপী একটি জরিপ করে। এই জরিপের ফলাফল নিয়ে আগামী কয়েকদিন কয়েক পর্বে আমরা কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করবো। আজ প্রকাশিত হচ্ছে এই জরিপ-এর মেথডোলজি নিয়ে।
জরিপটি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান মেথডোলজি। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপটি করা হয়, র্যান্ডম ডিজিটাল ডায়ালিং (Random Digit Dialing-RDD) পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ টেলিকম্যুনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৭) অফিসিয়াল টেলিফোনে প্ল্যান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সবধরণের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড-এর নিজস্ব ডেটা-বেইজ থেকে জরিপটির স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। একটি আর-বেইজড প্রোগ্রাম ব্যাবহার করে সিম্পল র্যান্ডম স্যাম্পলিং (এসআরএস) এর মাধ্যমে জরিপটির নমুনা বাছাই করা হয়েছে।
জরিপ পরিচালনা কাজে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড-এর ঢাকা অফিসের কল সেন্টার থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করা হয়।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন জরিপটিতে মার্জিন অফ এরর ৩.১ শতাংশ। জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় একমাস আগে যেহেতু তাদের মতামত জানিয়েছেন তাই এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেকক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।
উত্তরদাতাদের প্রোফাইল
শহর / গ্রাম: উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিলেন গ্রামীণ এলাকার আর ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ শহরের।
বিভাগ: উত্তরদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ছিলেন ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ, চট্টগ্রামের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, রাজশাহীর ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, রংপুরের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, খুলনার ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, বরিশালে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ময়মনসিংহের ৬ শতাংশ ও সিলেটের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
নারী / পুরুষ: উত্তরদাতাদের শতকরা ৫০ ভাগ ছিলেন নারী, বাকি ৫০ শতাংশ পুরুষ।
ধর্ম: জরিপের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলমান ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দশমিক ৫ শতাংশ ও খ্রিষ্টান দশমিক ২ শতাংশ।
বয়স: উত্তরদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ দশমিক ২ শতাংশ ছিলেন ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ছিলেন ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ছিলেন ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৬৫+ (উপর) বয়সী ছিলেন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
এছাড়া, ১৮ থেকে ১৯ বছরের ছিলেন ছিলেন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ছিলেন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: উত্তরদাতাদের মধ্যে ১৪ শতাংশের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা (শ্রেণী প্রথম-পঞ্চম) আছে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশের। মাধ্যমিক (এসএসসি ) পর্যন্ত পড়েছেন ১৫ দশমিক ৭, উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি ) ১২ দশমিক ১ শতাংশ, স্নাতক পর্যন্ত ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়েছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা। এছাড়া, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা নিয়েছেন দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা।
পেশা: উত্তরদাতাদের মধ্যে গৃহিনী ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ, দক্ষ শ্রমিক ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ১১ দশমিক ২ শতাংশ, শিক্ষার্থী ৬ দশমিক ৯, কৃষি খামার মালিক ৫ দশমিক ৯, অদক্ষ শ্রমিক ৫ দশমিক ১, কৃষি শ্রমিক ৪ দশমিক ৩, অবসরপ্রাপ্ত ২ শতাংশ ও কেরানির কাজ করেন ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া বেকার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, হোয়াইট কলার কর্মী ১ দশমিক ৪, বড় ব্যবসায়ী ১ দশমিক ১, সরকারি চাকরিজীবী দশমিক ৯ শতাংশ, ম্যানেজমেন্ট ও সুপারভাইজরি চাকরি করেন দশমিক ৫ শতাংশ ও সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নিরাপত্তা সেক্টরে কাজ করেন দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।
পরিবারের মাসিক আয়: ১৫ হাজার টাকা বা তার নিচে মাসিক আয় ৪১ শতাংশ উত্তরদাতার। ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক আয় ২৫ দশমিক ৬ শতাংশের, ২৫ হাজার ১ টাকা থেকে ৩৫ হাজার ১৪ দশমিক ৬ শতাংশের, ৩৫ হাজার ১ টাকা থেকে ৫৫ হাজার টাকা ৯ দশমিক ৯ শতাংশের এবং ৫৫ হাজার ১ টাকা বা এরচেয়ে বেশি আয় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতার।
যাযাদি/ এম