উত্তরাঞ্চলে শীত নেমেছে
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮
উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীত নেমেছে। হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলায় আগভাগেই এসেছে শীতের প্রকোপ।
বেড়েছে কুয়াশাও। গত দুই-তিন দিন ধরে ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে দিনাজপুর। এই জেলায় শনিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে বিপাকে পড়েছেন অসহায়, শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ। শীত মোকাবিলায় হিমসিম খাচ্ছেন তারা। এ জন্য সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় শীত পুরোপুরি জেঁকে বসতে পারে। এর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা কমে আসার কারণে শীত অনুভূত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সরেজিমন দেখা যায়, দিনাজপুরে ঘনকুয়াশার কারণে মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। কিছু কিছু যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে অনেকেই শরীরে জড়িয়েছেন শীতের পোশাক।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, অগ্রহায়ণের প্রথম দিনই ঘন কুয়াশা ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। ঘরের চালে টিপটিপ বৃষ্টির মতো পড়ছে হিমকণা। ক্রমশই কমছে দিনাজপুরের তাপমাত্রা। সূর্যের দেখা মেলেনি সকালে।
শনিবার সকালে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে।
সদর উপজেলার ফরিদপুর এলাকার ইজিবাইক চালক ফাতাহুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। ইজিবাইক চালানোর সময় শীতটা আরও বেশি লাগে। কুয়াশার কারণে সন্ধ্যার পর ও সকালে গাড়ি চালাতে কিছুটা অসুবিধা হয়। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য একটু কষ্টকর হয়।’
সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিউর ইউনিয়নের কৃষক নুর ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও সন্ধ্যা এবং সকালে হালকা করে শীত পড়ত। কুয়াশার পরিমাণও কম ছিল। গত দুই দিন থেকে শীত আর কুয়াশা বেশি পড়ছে। এখন পর্যন্ত ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’
দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় দুই কিলোমিটার। নভেম্বর মাসজুড়ে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ডিসেম্বরে দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শৈতপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছিল শীতের আবহ। বর্তমানে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা অনুভূতির এই জনপদে দিন দিন নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। রাতভর ঝরতে থাকা কুয়াশা থাকছে সকাল পর্যন্ত। যেন আগাম বার্তা দিচ্ছে হাড় কাঁপানো শীতের।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড় জেলায় প্রতিবছর শীতের আগমন ঘটে কিছুটা আগভাগে, আর শীত বিদায়ও নেয় দেরিতে। শনিবার অগ্রহায়ণের শুরুর দিন সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয়। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। জেলাজুড়ে রাতভর ঝরতে থাকা ঘন কুয়াশা ছিল সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
গত রোববার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা ছয় দিন তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। তবে দিনের বেলা ঝলমলে রোদ থাকায় বেড়ে যাচ্ছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এক সপ্তাহে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। দিনে রোদের কারণে গরম অনুভূত হলেও রাতে অনুভূত হচ্ছে শীত। এতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় শীতজনিত রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বর্তমানে দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা থাকায় মানুষের মধ্যে শীতজনিত সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে হবে। এ ছাড়া ধুলাবালু আর কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।’
শনিবার সকালে পঞ্চগড় জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর ঝরতে থাকা কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। গাছের পাতা, পাকা ধানের পাতা ও ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালবেলা সড়কের যানবাহনগুলো চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশার মধ্যেই কর্মজীবী মানুষ ছোটেন কাজের সন্ধানে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। তবে দিনের বেলা রোদ থাকায় দিন ও রাতের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় শনিবার সকালে কুয়াশার পরিমাণ ছিল বেশি।’
যা জানাল আবহাওয়া অফিস
শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভোরে কুয়াশা পড়া, তাপমাত্রা ধীরগতিতে কমে আসা এবং বাতাসে শুষ্কতা শীতের আগমনের প্রাথমিক লক্ষণ। সে অনুযায়ী সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে নদী অববাহিকা উত্তরবঙ্গ, সিলেট ও উপকূলীয় এলাকায় কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় এই দুই লক্ষণ (তাপমাত্রা কমা ও কুয়াশা পড়া) আরও প্রকট হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেনের সই করা ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এই সময় সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আর ভোরের দিকে দেশের নদী অববাহিকায় হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। একই সঙ্গে বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার পর্যালোচনায় এই অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও জানানো হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকায় কবে থেকে শীত জেঁকে বসতে পারেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ পারভিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় শীত পুরোপুরি জেঁকে বসতে পারে। এর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা কমে আসার কারণে শীত অনুভূত হবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় শীত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অনুভূত হতে শুরু করবে এবং ডিসেম্বরের শুরু থেকে তাপমাত্রা কমে মাঝামাঝি সময় পুরোপুরি জেঁকে বসতে পারে।
শীতের সম্ভাব্য সময়সীমার ব্যাপারে এই আবহাওয়াবিদ বলেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাতে ঠান্ডা অনুভূত হবে এবং দিনের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ঢাকায় শীতের প্রকৃত অনুভূতি শুরু হতে পারে। আর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যাযাদি/ এস